ডিজিটাল কায়দায় ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি

ময়মনসিংহ রেলস্টেশন
সংগৃহীত

ময়মনসিংহ রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন সাতটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। একটি ট্রেন চট্টগ্রাম আর বাকি ছয়টি ট্রেন ঢাকা যায়। সাতটি আন্তনগর ট্রেনে সব মিলিয়ে ময়মনসিংহ স্টেশনের জন্য বরাদ্দ করা আসনের সংখ্যার তুলনায় যাত্রীর চাপ থাকে পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেশি। করোনার জন্য কাউন্টারের পরিবর্তে অনলাইনে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। ফলে ডিজিটাল কায়দায় কালোবাজারে টিকিট বিক্রি করে মুনাফা লুটছে একটি মহল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টিকিটসংকটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে কালোবাজারিরা বেশ সক্রিয়। কাউন্টারে টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকায় তাঁরা অনলাইনে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়পত্র (আইডি) ও মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে টিকিট সংগ্রহ করে চড়া দামে সাধারণ যাত্রীদের কাছে বিক্রি করছেন। তাঁদের দৌরাত্ম্যের কারণে যাত্রীরা জিম্মি। বছরে দু-একবার অভিযান চালিয়ে কয়েকজন কালোবাজারিকে আটক করা হলেও অধিকাংশ ব্যক্তিরা থাকছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

জুনায়েদ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি অনলাইনে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি। পরে বাধ্য হয়ে পরিচিত একজনের মাধ্যমে জানতে পেরে রেলস্টেশন মোড় এলাকার একটি দোকান থেকে বেশি দামে টিকিট কিনেছেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, অনলাইনে টিকিট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কালোবাজারি চক্র ভিন্ন ভিন্ন আইডি ও মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে টিকিট কেটে রাখে। ফলে সাধারণ যাত্রীরা অনলাইনে কিংবা অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট কাটার চেষ্টা করে বেশির ভাগ সময় ব্যর্থ হন। পরে কালোবাজারে টিকিটি কাটতে বাধ্য হন। এ ছাড়া ট্রেনের যাত্রীদের বড় একটি অংশ অনলাইন সুবিধার বাইরে। ফলে তাঁদেরও বাধ্য হয়ে বেশি দামে কালোবাজারে টিকিট কাটতে হয়। ট্রেনের টিকিট কাটায় ডিজিটাল এই কায়দা কাজে লাগিয়ে মুনাফা লুটে নিচ্ছেন কালোবাজারিরা।

সোমবার সকালে মাহমুদুল আলম নামের ঢাকাগামী এক যাত্রী বলেন, ১০ দিন আগে অগ্রিম টিকিট ছাড়া হলেও কয়েক মুহূর্তেই ট্রেনের টিকিট শেষ হয়ে যায়। শাহাদাৎ হোসেন নামের অপর এক যাত্রী বলেন, ভাগ্য ভালো থাকলে অনলাইনে টিকিট পাওয়া যায়, তবে সেটা কঠিন ব্যাপার। এ জন্য তিনি কাউন্টারে সব টিকিট উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানান।

ময়মনসিংহ রেলস্টেশন সূত্র জানায়, এই করোনাকালে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে মোট আসনের অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে অনলাইনে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। সেই হিসেবে ঢাকাগামী তিস্তা এক্সপ্রেসে ৭৬টি, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসে ৩৮, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসে ৪৯, যমুনা এক্সপ্রেসে ৫৩, হাওর এক্সপ্রেসে ২১, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে ২১টিসহ মোট ২৫৮টি এবং চট্টগ্রামগামী বিজয় এক্সপ্রেসে ১১১টি আসন ময়মনসিংহের যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে।

বেসরকারি চাকরিজীবী মঞ্জরুল হান্নান বলেন, অনলাইনে টিকিট পাওয়া যায় না। কিন্তু বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে টিকিট পাওয়া যায়। সেসব টিকিট নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি করা হয়। আবার সুযোগ বুঝে একই টিকিট কম্পিউটার প্রিন্টারে ছাপিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করারও অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে প্রায়ই ট্রেনের টিটিইদের সঙ্গে যাত্রীদের বাগ্‌বিতণ্ডা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রেলওয়ে কর্মচারী বলেন, সম্প্রতি টিকিট কালোবাজারি রোধে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত সাপেক্ষে টিকিটে যাত্রীর নামসহ টিকিট বিক্রি শুরু করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এভাবে চলন্ত ট্রেনে টিকিট চেকিং কার্যক্রম অনেক সময়সাপেক্ষ বলে এর সুফল পাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে এ সুযোগে কালোবাজারির মাধ্যমে একজনের টিকিট দিয়ে আরেকজন যাত্রী হরহামেশাই ভ্রমণ করছেন।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ স্টেশন সুপার জহুরুল বলেন, অনলাইনে ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হচ্ছে। তাই টিকিটের চাহিদা বেশি। প্ল্যাটফর্মে কিংবা স্টেশনের অভ্যন্তরে কোথাও কালোবাজারি হয় না। বাইরে অন্য কোথাও কালোবাজারি হয়ে থাকলে এর সঙ্গে কারা জড়িত, তা চিহ্নিত করা কঠিন। তবে রেল কর্তৃপক্ষ কালোবাজারি প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।