ডিবির হাজতখানায় মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি

সাতক্ষীরায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হাজতখানায় বাবলু সরদারের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তে গতকাল রোববার রাতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সোহেল শেখ ও কনস্টেবল শরিফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ডিবির হাজতখানায় বাবলুর (৫৬) মৃত্যু নিয়ে পুলিশ বলছে, তিনি গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে নিহত ব্যক্তির স্বজনদের দাবি, তাঁকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। গত শনিবার রাতের কোনো এক সময় তিনি সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনসের মধ্যে অবস্থিত ডিবির হাজতখানায় মারা যান। বাবলু সরদার সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত জুড়ন সরদারের ছেলে।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আক্তার জানান, বাবলুর মৃত্যুর ঘটনায় এএসআই সোহেল শেখ বাদী হয়ে রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।

সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন আলম চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি উচ্চতার বাবলু সরদার শনিবার দিবাগত রাত তিনটা থেকে ভোর পাঁচটার মধ্যে তাঁর কোমরে থাকা রশি দিয়ে হাজতখানার সাড়ে ছয় ফুট উচ্চতার দরজায় ঝুলে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যায় ব্যবহৃত নাইলনের রশির দৈর্ঘ্য ছিল ৩৯ ইঞ্চি। তিনি বলেন, শনিবার বেলা ১১টার দিকে দেবহাটা উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের বাবলু সরদারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ তাঁকে আটক করা হয়। পরে বিকেলে গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে দেবহাটা থানায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে সাতক্ষীরা ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। রাতে তাঁকে হাজতখানায় রাখা হয়।

বাবলুর মেয়ে সুলতানা মুন্নি জানান, শনিবার সকাল ১০টার দিকে এক নারী তাঁদের বাড়িতে যান। ওই নারী তাঁর বাবার ঘরে ঢুকে দেখা করেন। পরে ডিবি পরিচয়ে ৪-৫ জন এসে তাঁর বাবার ঘর থেকে ৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে তাঁকে আটক করেন। এ সময় তাঁর বাবার হাতে হ্যান্ডকাপ দিয়ে মারধর করা হয়। মুন্নি বলছেন, তাঁর বাবার কাছে আসা নারীই ঘরে ফেনসিডিল রেখে গিয়েছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর বাবাকে যখন শনিবার সকালে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। তাঁর ওপর নির্যাতন করা হয়েছে।

বাবলুর স্ত্রী সাহানারা খাতুন বলেছেন, তাঁর স্বামী আত্মহত্যা করতে পারেন না। তিনি এ ঘটনার বিচার চান।

দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহ জানান, বাবলু সরদারকে আটক করার পর শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। আসামি বাবলু সরদারকে তাঁদের হেফাজাতে রাখার জন্য সাতক্ষীরা ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন আলম চৌধুরী জানান,রোববার বেলা একটার দিকে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে তাঁর লাশ স্বজনেরা দেবহাটার বসন্তপুর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান।

বাবলুর ভাই ফজর সরদার জানান, রোববার রাত ১০টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে মা গোলাম বিবির কবরের পাশে বাবলু সরদারকে দাফন করা হয়। তিনি আরও জানান, তাঁর ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে ভাই-বোন, ভাইপো-ভাইঝি—সবাই শোকে হতবিহ্বল। এ কারণে পরবর্তী সময়ে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না, তা বলা যাচ্ছে না।

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, হাজতখানায় মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যে একজন এএসআই ও একজন কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে এএসপি ইকবাল হোসেনকে প্রধান, পরিদর্শক মিজানুর রহমান ও নাছিরউদ্দিনকে সদস্য করে তিন সদস্যের কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।