ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহকারী চক্রের ১৩ সদস্য আটক

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তর সরবরাহ করার অভিযোগে ১৩ জনকে আটক করেছে রাজবাড়ী গোয়েন্দা পুলিশ
ছবি: প্রথম আলো

ডিভাইসের মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তর সরবরাহ করার অভিযোগে রাজবাড়ীতে ১৩ জনকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তা, উপজেলার রিসোর্স সেন্টারের প্রশিক্ষক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিদর্শক, সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পরীক্ষার্থী। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিদের জানানো হয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের দাবি, সবাইকে একই বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে। উত্তর সরবরাহ করা চক্রের হোতা হলেন মাঈনুল ইসলাম হাওলাদার (৪২) নামের এক ব্যক্তি। তাঁর বাড়ি ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার আওড়াবানিয়া গ্রামে। তিনি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উপজেলার রিসোর্স সেন্টারে (ইউআরসি) প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি রাজবাড়ী কালুখালী উপজেলা ইউআরসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

অন্যরা হলেন রাজবাড়ীর কালুখালী খামারবাড়ির ইব্রাহিম হোসেন, ছোট কলকলিয়া গ্রামের সাগর আহমেদ, শিকজান গ্রামের বিজয় বালা, সংগ্রামপুর গ্রামের রেজাউল করিম, চরনারায়ণপুর গ্রামের আবু ছালমান, কালিকাপুর গ্রামের মনসুর মণ্ডল, মালিয়াট গ্রামের রুমান হাসান রনি, ফরিদা বেগম, পাংশা উপজেলার রুবেল মাহমুদ, রাজবাড়ী সদর উপজেলার দক্ষিণ ভবানীপুর গ্রামের মিজানুর রহমান, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার তালগাছিয়া গ্রামের হারুন সরদার ও আওড়াবাড়িয়া গ্রামের মাঈনুল ইসলাম।

তাঁদের মধ্যে রুবেল মাহমুদ কৃষি ব্যাংকে কর্মকর্তা, রুমান, নুরুল, হারুন ও ইব্রাহিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, মিজানুর মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক এবং রেজাউল পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন। গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে ২০টি মুঠোফোন, দুটি মাস্টারকার্ড সাদৃশ্য ডিভাইস (সিমসহ), দুটি ইয়ারফোন, আড়ি পাতা ডিভাইসের ছোট ব্যাটারি ছয়টি, পুরাতন একটি মডেম, ১০ হাজার টাকা, হাতে লেখা পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর, পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্রের ফটোকপি, বিভিন্ন গাইড বই, সোনালী ব্যাংকের একটি ভিসা ডেবিট কার্ড, ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেডের একটি ডেবিট কার্ড এবং দুটি স্যামসাং পাওয়ার ব্যাংক জব্দ করা হয়।

আটক ব্যক্তিদের সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হলে পরীক্ষার্থীদের উত্তর সরবরাহ কাজে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন মাঈনুল হাওলাদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এবারই প্রথম এ কাজের সঙ্গে জড়িত হয়েছি, আগে কখনো এমন কাজ করিনি। তিনজনকে উত্তর সরবরাহ করেছি।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীতে মোট সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আটটি কেন্দ্রে সরকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৬ হাজার ২০১ জন। তাঁদের মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৪ হাজার ৩৫৫ জন। ৮০ নম্বরের বহুনির্বাচনী পরীক্ষাটি শুরু হয় সকাল সাড়ে ১০টায়, শেষ হয় দুপুর ১২টায়।

রাজবাড়ী গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রাণবন্ধু চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, গোপন তথ্যের মাধ্যমে পরীক্ষা চলাকালে তাঁরা প্রতারক চক্রের সন্ধান পান। এরপর শহরের দক্ষিণ ভবানীপুর গ্রামের মিজানুরের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখান থেকে ১৩ জনকে আটক করা হয়। তাঁদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মকর্তা, শিক্ষক, পরীক্ষার্থী রয়েছেন। এ সময় আটক ব্যক্তিদের তল্লাশি চালিয়ে জালিয়াতি চক্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সুবর্ণা রানী সাহা বলেন, বিষয়টি তিনি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর জানতে পেরেছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্ধান্ত নেবেন। রাজবাড়ীর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমিন কোরেমী বলেন, এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। তবে প্রতারক চক্র তেমন কিছু করতে পারেনি। কোনো কিছু করার আগেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ কারণে পরীক্ষা বাতিল করা হবে না।