ডিলারদের অনিয়ম, বেশি দাম দিতে হয় চাষিকে

খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে সার কিনতে গিয়ে কৃষককে বস্তাপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা

নির্ধারিত ইউনিয়নে নিজস্ব গুদামে রেখে সার বিক্রি করার কথা ডিলারদের। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ছয়টি ইউনিয়নের ডিলাররা সার মজুত করছেন পৌর শহরে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সে সার বিক্রি করা হয় গ্রামের কৃষকদের কাছে।

প্রায় এক যুগ ধরে এমন অবস্থা চলায় সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকায় সার কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে সার কিনতে গিয়ে কৃষককে বস্তাপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। বিষয়টি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানলেও এখনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সার ডিলার নিয়োগ ও বিতরণসংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী, ইউনিয়নের জন্য নির্ধারিত সার ডিলার ওই ইউনিয়নে নিজস্ব গুদাম তৈরি করে সেখানে সার মজুত করবেন এবং সরকারনির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করবেন।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়ন পর্যায়ের ডিলাররা সার বিক্রি করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকায়। ফলে এ এলাকায় ডিলার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন পৌর এলাকার জন্য নির্ধারিত ডিলার কামরুল আরেফিন। গত ১৫ এপ্রিল বিষয়টি নিয়ে তিনি সদর উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কমিটির সদস্যসচিব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।

অভিযুক্ত ডিলাররা হলেন উপজেলার সুন্দর ইউপির মেসার্স আলতাফ হোসেন অ্যান্ড সন্স, চরবাগডাঙ্গার মেসার্স সাজ্জাদ অ্যান্ড সন্স, নারায়ণপুরের ইসলাম অ্যান্ড ব্রাদার্স, ইসলামপুরের মেসার্স শাহজাহান অ্যান্ড সন্স, দেবীনগরের মেসার্স একতা এন্টারপ্রাইজ ও আলাতুলির রফিক ট্রেডার্স।

অভিযুক্ত ডিলারদের ২১ এপ্রিল সতর্ক করা হয় এবং কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সাত দিনের মধ্যে তার জবাব দিতে বলা হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কানিজ তাসনোভা বলেন, কেউ সন্তোষজনক জবাব দেননি। ভাড়া করা ছোট গুদামে কেউ কেউ সার নিয়ে গেলেও তা আংশিক। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই মাসেও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

গ্রামীণ পর্যায়ে সারের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউনিয়নের চিমঠা পাড়ার কৃষক সেরাজুল ইসলাম (৫৫) বলেন, ইউরিয়া সারের সরকারনির্ধারিত দাম প্রতি বস্তা ৮০০ টাকা। কিন্তু তাঁকে ১০০০ থেকে ১০৫০ টাকায় সার কিনতে হচ্ছে। ন্যায্যমূল্যে সার কিনতে না পারায় তাঁর চার হাজার টাকার বেশি অতিরিক্ত খরচ হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিলার মেসার্স ইসলাম অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী তরিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মা নদীর ওপারে সার নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এপারে (একটি ওয়ার্ড আছে) নারায়ণপুর ইউপির জনতার হাটে তাদের ভাড়া করা গুদাম আছে। কৃষকেরা এ পাড়ে এসে সার নিয়ে যেতে পারেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নজরুল ইসলামও বলেন, অভিযুক্তরা প্রভাব খাটিয়ে ২০০৯ সাল থেকে নীতিমালা লঙ্ঘন করে ব্যবসা করে আসছেন। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।