ডিলারদের বিরুদ্ধে বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ

কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ঠাকুরগাঁওয়ে ডিলারদের বিরুদ্ধে ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সার অনেক বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। কৃষকদের কাছ থেকে সারের দাম বেশি নেওয়া হলেও ডিলাররা কোনো পাকা রসিদ (ভাউচার) দিচ্ছেন না। এতে কারও কাছে অভিযোগও দিতে পারছেন না কৃষকেরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার প্রতি বস্তা (৫০ কেজির বস্তা) টিএসপি সারের খুচরা মূল্য ১ হাজার ১০০ টাকা (২২ টাকা প্রতি কেজি), ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ১ হাজার ৩৫০ টাকা (২৭ টাকা কেজি) এবং এমওপি ৭৫০ টাকা (১৫ টাকা কেজি) নির্ধারণ করে দিয়েছে।
রবি মৌসুমে এবার (জুলাই থেকে অক্টোবর) জেলায় ৪ হাজার ৬৬৬ টন টিএসপি, ৭ হাজার ৫১০ টন এমওপি এবং ৮ হাজার ৯০৪ টন ডিএপি সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিসিআইসির ৬৩ ও বিএডিসির ১৫৩ জন ডিলারের মাধ্যমে জেলার কৃষকদের কাছে এ সার বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ডিলার ও খুচরা সার বিক্রেতারা সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে সার বিক্রি করছেন।

সদর উপজেলার বালিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল জলিল এবার চার বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু আবাদ করেছেন। তিনি স্থানীয় সারের দোকান থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকায় আট বস্তা টিএসপি সার কিনেছেন। আবদুল জলিল বলেন, সরকারি দামে প্রতি কেজি টিএসপি ২২ টাকায় বিক্রি করার কথা; দোকানদার তা বিক্রি করছেন ২৯ টাকা। বস্তাপ্রতি টিএসপি সার ৩৫০ টাকা বেশি দামে কিনতে হয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল গ্রামের কৃষক সনাতন বর্মণ বলেন, ‘কয়েক দিন আগে লাহিড়ীহাটের একজন খুচরা সার বিক্রেতার কাছ থেকে প্রতি বস্তা টিএসপি সার দেড় হাজার টাকায় কিনেছি। দোকানদারের কাছে পাকা রসিদ চাওয়ায় সার বিক্রি না করার হুমকি দেন দোকানদার। সার কেনার রসিদ না পাওয়ায় কারও কাছে অভিযোগও করতে পারছি না।’
নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রির কারণ জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ীহাটের খুচরা সার ব্যবসায়ী পবন সিংহ বলেন, ‘সার পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বেশি দামে সার কিনতে হয়েছে। বেশি দামে সার কিনে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ বাজারের ব্যবসায়ী আনছার আলী বলেন, অন্য জায়গা থেকে বেশি দামে টিএসপি সার কিনে এনে এখানে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
সারের সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও শহরের সার ডিলার এনামুল হক সরকার বলেন, ‘চাহিদা মোতাবেক সার পাচ্ছি না বলে টিএসপি সারের সংকট দেখা দিয়েছে।’
পীরগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের মোবারক আলী বলেন, গত বুধবার তিন বস্তা টিএসপি ও দুই বস্তা ডিএপি সার কেনা হয়েছে। প্রতি বস্তা টিএসপির দাম দেড় হাজার এবং ডিএপির দাম সাড়ে আট শ টাকা করে নিল। এদিকে বেশি দামে সার বিক্রি করায় ১১ নভেম্বর পীরগঞ্জের বিসিআইসির এক ডিলার এবং আরেক খুচরা বিক্রেতাকে জরিমানা করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁও সহকারী পরিচালক শেখ সাদী।
এ বিষয়ে বিসিআইসির ডিলারদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুজ্জামান বলেন, এই এলাকার কৃষকের কাছে তিউনিসিয়া থেকে আমদানি করা টিএসপির চাহিদা রয়েছে। তবে ডিলারদের সেই সার বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। অনেক জায়গায় অনুমোদনহীন কিছু ব্যবসায়ী জেলার বাইরে থেকে তিউনিসিয়ার টিএসপি সংগ্রহ করে বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন। বেশি দামে সার বিক্রির সঙ্গে কোনো ডিলার জড়িত নন।

তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, ডিএপি সার শাকসবজি, রবিশস্য, ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে বেশি কার্যকর। এ বিবেচনায় চাষিদের মধ্যে ডিএপি সার ব্যবহারের জন্য সরকার টিএসপি সার আমদানি সীমিত করেছে। তবে অভ্যস্ত থাকার কারণে কৃষকেরা খেতে টিএসপি ব্যবহার করে আসছেন। এই সুযোগে অসাধু সার ব্যবসায়ীরা বেশি দামে টিএসপি বিক্রি করে থাকতে পারেন। কৃষক পর্যায়ে টিএসপির বিকল্প হিসেবে ডিএপি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে সার বেশি দামে বিক্রির সুযোগ থাকবে না।
আফতাব হোসেন জানান, বুধবার পর্যন্ত জেলায় ২ হাজার ৪৩ মেট্রিক টন ইউরিয়া, ৮৮০ মেট্রিক টন টিএসপি, ২ হাজার ১২০ মেট্রিক টন এমওপি এবং ১ হাজার ৪ মেট্রিক টন ডিএপি মজুত রয়েছে। সারের কোনো ঘাটতি নেই।
জেলা সার, বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘সরকার-নির্ধারিত দামের বেশি দামে সার বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। সারের ডিলারদের দোকানে অভিযান পরিচালনা করছি। কোনো অনিয়ম পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’