ডোমার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বহিষ্কার দাবি মুক্তিযোদ্ধাদের

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে পদ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। মঙ্গলবার ডোমার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে
ছবি: প্রথম আলো

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগে ডোমার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ হারিয়েছেন তোফায়েল আহমেদ। এবার তাঁকে দলের সাধারণ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকেও বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নীলফামারী সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিট কমান্ড।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অভিযোগ করেন, ‘উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ একজন যুদ্ধাপরাধীর সন্তান। তিনি ১৯৮৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নীলফামারী-১ আসনে ফ্রিডম পার্টির প্রার্থী মো. নুরন্নবীর ডোমার উপজেলা সমন্বয়কারী ছিলেন। পরে ভোল পাল্টিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পান।’

বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, ‘ক্ষমতার দম্ভে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানদের নানা কূটক্তিতে লিপ্ত হন তোফায়েল আহমেদ। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে উপজেলা পরিষদের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন।’

সংবাদ সম্মেলনে করা অভিযোগের বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সহিদুল ইসলাম। বক্তব্য দেন সাবেক উপসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হক, ডিমলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শামসুল হক, জলঢাকা উপজেলা কমান্ডার হামিদুর রহমান, ডোমার উপজেলা কমান্ডার নূরন নবী প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে জেলার ছয় উপজেলার অর্ধশতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হক বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীর সন্তান এবং ফ্রিডম পার্টির নেতা তোফায়েল আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার রাখেন না। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আওয়ামী লীগের প্রভাবকে ব্যবহার করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করেছেন। এ জন্য তাঁকে উপজেলা আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতিই যথেষ্ট শাস্তি নয়। আমরা তাঁর দলের (আওয়ামী লীগের) সাধারণ সদস্য পদ ও উপজেলা পরিষদের পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।’

সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো জাতীয় দিবসে গত ২৬ মার্চের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক, তা আমরা চাই না। তাই আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আগে তোফায়েল আহমেদকে দলের সাধারণ সদস্য পদ এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় বৃহৎ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, ডোমার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন জাতীয় দিবসে পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠান বর্জন করে আসছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানেরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ মার্চ তোফায়েল আহমেদের অংশগ্রহণের কারণে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান বর্জন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানেরা। এ কারণে তাঁদের সঙ্গে তোফায়েল আহমেদ অশালীন আচরণ করেন বলে অভিযোগ। এর জেরে গত ৩১ মার্চ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তোফায়েল আহমেদকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতির ঘোষণা দেওয়া হয়।