ডোমারে সমবায় সমিতি: দুই মাসে ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে উধাও পরিচালক

গত বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সমবায় সমিতি চালু করেছিলেন তিনি। সদস্যদের জামানতের বিপরীতে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। শুরুতে লাভের টাকাও দেন কয়েকজনকে। এরপরই গ্রাহকদের আগ্রহ বাড়ে। সে সুযোগে মাত্র দুই মাসে গ্রাহকের প্রায় ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা হন তিনি। এ ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর ডোমার উপজেলায়।

অতিরিক্ত লাভের প্রলোভন দেখিয়ে সমবায় সমিতির সদস্যদের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওই সমিতির পরিচালক মামুন হাসান মালিক ওরফে আদম সুফিকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব–১৩। গত বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার সাভার থেকে তাঁকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল বৃহস্পতিবার রংপুরে র‌্যাব–১৩–এর সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানানো হয়।

মামুনের প্রাথমিক স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বর্ণনা দেন র‌্যাব–১৩–এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর আবদুল্লাহ আল মঈন হাসান। তিনি বলেন, প্রতারণার উদ্দেশ্যে গত বছরের নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মামুন হাসান তাঁর সহযোগীদের সাহায্যে ডোমার থানার সাহাপাড়ায় একটি সমবায় সমিতি চালু করেন। এর নাম দেওয়া হয় ‘ডোমার বাজার ভোগ্যপণ্য সমবায় সমিতি’। সদস্যের জামানতের বিপরীতে সাত দিনের মধ্যে একটি পণ্য দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করা হয়। পাশাপাশি বলা হয়, জামানত ফেরত নেওয়ার সময় গ্রাহককে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী নারীদের মূল সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করে সমিতিটি। সমবায় সমিতির মাধ্যমে কয়েকজন নারী সদস্য প্রাথমিকভাবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জামানতের মূল টাকাসহ লভ্যাংশ পান। পরে অন্যান্য নারীরা নিজেদের সহায়–সম্বল বিক্রির অর্থ দিয়ে সমিতির সদস্য হন। মাত্র দুই মাসে ছয় কোটি টাকা সংগ্রহের পর সমিতির কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়।

টাকা হারিয়ে সমিতির এক হাজারের বেশি সদস্য ও দুই শতাধিক নারী কর্মী গত বছরের ২০ ডিসেম্বর ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেন। এ ছাড়া ভুক্তভোগীরা টাকা উদ্ধারের জন্য ডোমার থানায় গত ২৪ জানুয়ারি চারজন প্রতারকের নামে একটি মামলা এবং র‌্যাব-১৩ ও র‌্যাবের নীলফামারী কোম্পানি কমান্ডারের কাছে অভিযোগ দেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মূল হোতা মামুন হাসান ঢাকায় তাঁর এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছেন বলে খবর পায় র‌্যাব। বুধবার সন্ধ্যায় সেখান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মেজর আবদুল্লাহ আল মঈন হাসান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামুন হাসান প্রতারণার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। এই চক্রের অন্য সদস্যদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।