‘ড্রাগনস আই’ অথবা লংগান

লিচুর সঙ্গে স্বাদে বেশ মিল আছে। এর উৎপত্তি চীন, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও ভারতের কিছু অঞ্চলে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের একটি গাছে ধরে আছে লংগান।ছবি: প্রথম আলো

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কল্যাণপুর হর্টিকালচার সেন্টারের মাতৃবাগানে একটি চার বছর বয়সী গাছে থোকায় থোকায় ধরে আছে লংগান। বাদামি খোসা আর মার্বেল আকারের গোল লিচু হলো লংগান। আকারে সাধারণ লিচুর সঙ্গে পার্থক্য থাকলেও স্বাদে বেশ মিল আছে। খোসা ছাড়ালে চোখের মতো দেখতে, তাই চীনে লংগানকে বলা হয় ‘ড্রাগনস আই’।

ফলটির উৎপত্তি চীন, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও ভারতের কিছু অঞ্চলে। সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ মো. হাবিবুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের গাছটিতে দুই বছর ধরে থাইল্যান্ডের একটি জাতের লংগান ধরছে। লংগান ফল হিসেবে লিচু পরিবারের সদস্য। তিন বছরের মধ্যেই ফল ধরতে শুরু করে। প্রতিটি ডালের মাথায় থোকায় থোকায় ধরে লংগান। ছাদবাগানের উপযোগী এই লংগান। বড় টবে ১০-১২ বছর পর্যন্ত রাখা যায়। দোআঁশ মাটিতে ভালো ফলন হয়। রোগবালাই বা পোকামাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে। তাই কীটনাশক ছাড়াই এর ফলন পাওয়া যায়। লিচু ঝরে পড়ে। কিন্তু লংগান ঝরে পড়ে না।

বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানি করে দেশে আনা এই ফল ঢাকার বিভিন্ন সুপারশপ ও বড় ফলের দোকানে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। বাজারে লিচু শেষ হয়ে যাওয়ার এক মাস পর, অর্থাৎ জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে লংগান পাকতে শুরু করে। থাকে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এই সময়ে লিচুর বিকল্প হিসেবে লংগান জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে ধারণা উদ্যানতত্ত্ববিদদের।

হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক মোজদার হোসেন জানান, গুটি কলমের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়ে থাকে। এর চারা উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লংগানের বাগান করতে চাইলে ৮-১০ ফুট দূরত্বে চারা রোপণ করতে হয়।

সেন্টারের ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’–এর পরিচালক মেহেদী মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, লিচু ফুরিয়ে যাওয়ার পর লংগান পাওয়া যাবে। এর সংরক্ষণক্ষমতা লিচুর চেয়ে বেশি। ফ্রুকটোজ দিয়ে এর মিষ্টতা তৈরি হয়। ফলে ডায়াবেটিস রোগীরাও খেতে পারবেন। সংরক্ষণক্ষমতার কারণে এটি বিদেশেও রপ্তানিযোগ্য। সারা দেশের হর্টিকালচার সেন্টারগুলোতে এর মাতৃগাছ লাগানো হয়েছে। আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে এর চারা আগ্রহী ফলচাষিদের দেওয়া সম্ভব হবে।