ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে অবৈধভাবে

চক্রটি অবৈধভাবে বালু বিক্রি করে প্রতিদিন প্রায় ৩২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

পদ্মা সেতুর এক কিলোমিটার দূর থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। গত শনিবার জাজিরার পাইনপারা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পাইনপাড়া এলাকায় পদ্মা নদী থেকে ৪০টি খননযন্ত্র (ড্রেজার) দিয়ে দিনে অন্তত ৮০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। পদ্মা সেতুর এক কিলোমিটার পূর্বে ও পাইনপাড়া গ্রামের পাশ থেকে লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলার কারণে পাইনপাড়ার চারটি গ্রাম ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।

বালুর কারবারের সঙ্গে জড়িত চক্রটি অবৈধভাবে বালু বিক্রি করে প্রতিদিন প্রায় ৩২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে বালু ব্যবসায়ী ও ড্রেজার শ্রমিকেরা জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এক প্রকৌশলী প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু একটি বড় অবকাঠামো। এর কাছাকাছি জায়গা থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ঝুঁকিপূর্ণ। আর নকশা ও সমীক্ষা ছাড়া যেকোনো স্থান থেকেই বালু উত্তোলন করলে ভাঙনের ঝুঁকি থাকে।

বালু ব্যবসায়ী ও স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, পদ্মা সেতুর পূর্বে পাইনপাড়া চরটি অবস্থিত। চরে ১ হাজার ২০০ পরিবারের বাস। পাইনপাড়া চরটির চার দিক দিয়ে পদ্মা নদী। চরের পশ্চিম দিকে পদ্মা সেতু, দক্ষিণে সেনানিবাস, সাত্তার মাদবর, মঙ্গল মাঝির ঘাট, উত্তরে ও পূর্বে প্রবহমান পদ্মা নদী। চরটির পশ্চিম দিকে পদ্মা সেতু ঘেঁষে জাজিরা-শিমুলিয়া নৌপথের ফেরি, লঞ্চ ও অন্যান্য নৌযান চলাচল করে।

দুই বছর ধরে পাইনপাড়া এলাকাটি নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। ভাঙনে অন্তত আড়াই শ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে গত বছর পাউবো বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেছে।

পাইনপাড়া চরের উত্তর দিকে পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলনের জন্য ৪০টি ড্রেজার বসানো হয়েছে। একেকটি ড্রেজার দিয়ে দিনে–রাতে ২৪টি বাল্কহেড (বালু পরিবহনের নৌযান) বোঝাই করা হয়। সে হিসাবে প্রতিদিন ৯০০–এর বেশি বাল্ডহেড বালু দিয়ে বোঝাই করা হয়। একেকটি বাল্কহেডে গড়ে ৯ হাজার ঘনফুট বালু ধরে। সে হিসাবে ৯০০ বাল্কহেডে ৮০ লাখ ঘনফুট বালু ধরে। ওই বালু ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। চক্রের সদস্যরা প্রতি ঘনফুট বালুর জন্য ৪০ পয়সা করে নেন। এতে তাঁরা প্রতিদিন ২৮ থেকে ৩২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

ড্রেজারচালক, শ্রমিক ও বালু তোলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইনপাড়া এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করছেন মাওয়া ও শিমুলিয়া এলাকার জহির ফকির, মতিউর রহমান ওরফে মতি মাদবর, সুলতান মোল্যা, জয়নাল মাদবর, তারা মিয়া, সেলিম দেওয়ান, আলতাফ শেখ, জামাল হোসেন, ফেরদৌস তালুকদার, বাবু ব্যাপারী; আর নাওডোবা এলাকার বাচ্চু মিয়া, রাজু মাদবর, মামুন খান, দেলোয়ার ছৈয়াল, জাকির ছৈয়াল, রাজু মোড়ল।

জানতে চাইলে মাওয়া এলাকার মতি মাদবর মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা নদীতে বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর কাজ চলছে। এর মালামাল নেওয়ার জন্য চীনা কোম্পানি আমাদের বালু উত্তোলন করতে বলেছে। তবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।’

ড্রেজারের মালিক নাওডোবা এলাকার মামুন খান বলেন, ‘পদ্মা সেতুর নদীশাসনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রোর কাছ থেকে আমরা বালু কাটার অনুমতি এনেছি।’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো বালু উত্তোলনের অনুমতি দিতে পারে কি না, জানতে তিনি বলেন, ‘সব কিছু ম্যানেজ করেই আমরা বালু বিক্রি করছি।’

জানতে চাইলে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নদীশাসন কাজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শরফুল ইসলাম সরকার প্রথম আলোকে বলেন, নদীশাসন প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত জায়গা থেকে প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের জন্য চারটি ড্রেজার নিযুক্ত করা হয়েছে। পদ্মা নদীর যত্রতত্র থেকে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। যাঁরা এ কাজ করছেন, তাঁরা অবৈধভাবে করছেন।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমতি জেলা প্রশাসন দেয়নি। আমরা অভিযান চালিয়ে অবৈধ ড্রেজার জব্দ করব।’