ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ি বেড়েছে

লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বেড়েছে। সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার শহীদনগরে
প্রথম আলো

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারঘোষিত ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ আজ সোমবার ষষ্ঠ দিন চলছে। সকাল থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা থেকে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার অংশে পণ্যবাহী যানবাহনের (ট্রাক, লরি ও কাভার্ড ভ্যান) চলাচল বেড়েছে। পাশাপাশি ছোট যানবাহনও চলাচল করছে।

উপজেলার বাজারগুলোতে নির্দিষ্ট হাটের দিনে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। অন্য দিন পণ্যের দোকানগুলো প্রায় ক্রেতাশূন্য থাকছে। লকডাউনের কারণে এ রকম অবস্থা বিরাজ করছে।

জরুরি কাজে বের হওয়া ঢাকা ও কুমিল্লাগামী সাধারণ যাত্রী, রোগী ও ব্যবসায়ীরা মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, পিকআপ, রিকশাভ্যান ও লোকাল মাইক্রোবাসে করে গন্তব্যে যাচ্ছেন। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার শহীদনগর বাজারের মুদিদোকানদার মো. বিল্লাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, কঠোর লকডাউনের খবরের শুরুতে অসংখ্য ক্রেতা ছিল। লকডাউনের শুরুতে বাজারে লোকজন ভালোই আসে। তাই বিক্রিও ভালো ছিল। বর্তমানে একান্ত প্রয়োজন না হলে মানুষ ঘর থেকে বের হয় না। তাই বিক্রিও দিন দিন কমে যাচ্ছে।

ফল বিক্রেতা উপজেলার দশপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ফলগুলো পঁচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এই মায়ায় দোকান খুলে বসে আছি। কিন্তু লকডাউনের চতুর্থ দিন থেকে বিক্রি নাই বল্লেই চলে।’

স্থানীয় মাইক্রোবাসের চালক দাউদকান্দির চশই গ্রামের বাসিন্দা সাগর মিয়া সকাল ১০টায় দাউদকান্দির শহীদনগরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বউ-পুলাপাইন নিয়ে বিপদে আছি। তাই লকডাউনের মধ্যেও গাড়ি নিয়ে বের হতে বাধ্য হয়েছি। সড়কে যাত্রীর চেয়ে ছোট গাড়ি বেশি থাকায় আশানুরূপ টাকা পাচ্ছি না।’

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক দাউদকান্দির সুন্দলপুর গ্রামের বাসিন্দা আক্কাস আলী বলেন, লকডাউনে বাজার ভালো। কিন্তু লকডাউনের শুরুতে প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হতো। বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি টোল প্লাজা থেকে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকায় ছোট যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় আয় কমে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় পৌঁছেছে।

সকাল সোয়া নয়টায় দাউদকান্দির শহীদনগর বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে কথা হয় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী প্রাণ কোম্পানির মিল্ক ভিটার পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যানের চালক হামিদ উল্লার সঙ্গে। তিনি বলেন, লকডাউনের শুরুতে এবং শুরু হওয়ার আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে প্রচণ্ড চাপ ছিল। চতুর্থ–পঞ্চম দিনে চাপ কমে গিয়েছিল। ভোক্তাদের পণ্যের চাহিদায় সোমবার থেকে পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ পুনরায় বাড়তে শুরু করেছে।

দাউদকান্দির ইটাখোলা গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী শাহজালাল মোল্লা ও তাঁর মেয়ে সাদিয়া আক্তার সোমবার সকালে মহাসড়কের শহীদনগর বাসষ্ট্যান্ডে অটোরিকশায় বসে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছোট যানবাহনগুলো চলাচল করায় ভাড়া একটু বেশি হলেও জরুরি কাজে বের হওয়া যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে সমস্যা হচ্ছে না।

দাউদকান্দির ষোলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আবদুল মোতালিব বলেন, ঘরের প্রয়োজনীয় পণ্য হাটের দিনে কিনে ফেলি। তাই অন্য দিন বেকার সময় আড্ডায় না বসলে ঘর থেকে বের না হলেও চলে।

অটোরিকশাচালক দাউদকান্দির নরদী গ্রামের আবদুর রশিদ বলেন, এখন যেভাবে মহাসড়কে চালাতে পারছি, তা বন্ধ না হলে স্ত্রী-তিন ছেলেকে নিয়ে নিয়মিত দুমুঠো ভাত খেতে কোনো সমস্যা হবে না।

দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল হক বলেন, লকডাউনে চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। যাত্রী ও চালকদের কাগজপত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা নিয়মিত পালিত হচ্ছে।