ঢাকা থেকে ঝুঁকি নিয়ে ঈদযাত্রা, হাটিকুমরুল থেকে চলছে আন্তজেলা বাস
মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জে এসেছেন অনেকেই। এমনই একজন জেলার তাড়াশ উপজেলার বারুহাস গ্রামের আবুল হোসেন (৪২)। ঢাকায় একটি ওষুধ কোম্পানিতে কাজ করেন তিনি। স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে মোটরসাইকেলে গাদাগাদি করেই এসেছেন শুধু গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবেন বলে। এক সন্তানের বয়স দুই বছর, আরেক সন্তানের বয়স মাত্র ছয় মাস। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
এত কষ্ট করে দুধের শিশুদের নিয়ে জীবনের ঝুঁকি সত্ত্বেও মোটরসাইকেলে কেন এসেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল হোসেন বলেন, ‘সারা বছরে ঈদেই একটু ছুটি পাই। এ ছাড়া বাকি সময় গ্রামের বাড়িতে আসা সম্ভব হয় না। বাবা, মা, ছোট ভাইবোনেরা অনেক আশায় থাকে, আমি বাড়িতে আসব। সবাই একসঙ্গে ঈদের দিনে আনন্দ করব। যে কারণে কষ্ট হলেও সেই আনন্দের কাছে এই কষ্ট কিছুই না।’ ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত আবুল হোসেনকে মোটরসাইকেল ভাড়া দিতে হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকা।
ঢাকা থেকে ঈদ করতে আসা এমন আরেকজন উল্লাপাড়ার বোয়ালিয়া গ্রামের কানিজ ফাতেমা (৩৫)। ভোররাতে স্বামী, তিন বছরের সন্তানসহ ট্রাকের সামনে চালকের পাশের আসনে বসে এসেছেন তিনি। এ জন্য তাঁদের ভাড়া দিতে হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা।
ঢাকা থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত অনেকেই আসছেন এভাবে। সেখান থেকে পাবনা, নাটোর, রাজশাহীর আন্তজেলা দূরপাল্লার বাস কিছু কিছু চলতে দেখা গেছে। দুপুরে হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকার নাটোর মহাসড়ক ও শাহজাদপুর-পাবনা মহাসড়কে ডেকে ডেকে এসব বাসের যাত্রী সংগ্রহ করছেন হেলপাররা।
এমনই একটি বাসের হেলপার (চালকের সহকারী) নাটোরের কাশেম আলী। নিষেধাজ্ঞা না মেনে গাড়ি নিয়ে মহাসড়কে কেন এসেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দিন কামাই করে দিন খাই। আমাদের কোনো সঞ্চয় নাই। সংসারে ১০-১২ জন সদস্য, আবার সামনে ঈদ। এমন অবস্থায় তাঁদের নিয়ে কী খাই, কেমনে চলি, আমাদের দেখার কেউ যেন নাই। তাই বাধ্য হয়ে, অনেক কষ্ট করে, পুলিশের বকাঝকা খেয়েই এমন পালায়ে পালায়ে সিরাজগঞ্জ রোড এলাকা থেকে নাটোর, রাজশাহী এলাকার কিছু যাত্রী তুলছি।’
এ সময় বেশ কিছু যাত্রীকে রাজশাহীগামী বাসগুলোতে উঠতে দেখা যায়। এসব বাসে হাটিকুমরুল থেকে নাটোরের ভাড়া দিতে হচ্ছে ২৫০ টাকা। রাজশাহী যেতে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা চাইলেও পরে কিছু কম নেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন যাত্রীরা।
সরকারের নির্দেশনাতে আটকে রাখা যাচ্ছে না ঈদে ঘরমুখী মানুষদের। ঢাকা থেকে কেউ কেউ ভেঙে ভেঙে মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যান, মুরগির গাড়ি, বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ট্রাকে করে গ্রামের বাড়ির দিকে যাচ্ছেন। তবে মহাসড়কে কোনো যানজট লক্ষ করা যায়নি।
জানতে চাইলে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজাহান আলী প্রথম আলোকে বলেন, জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে হাইওয়ে পুলিশও মহাসড়কে সার্বক্ষণিক নজরদারি করে যাচ্ছে। মহাসড়কে অনিয়ম করে বাসের ছাদে, ট্রাকে, পিকআপ ভ্যানে গাদাগাদি করে যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে যানবাহনগুলো। তবে ঘরমুখী মানুষের চাপেই এ অনিয়ম বন্ধ করা যাচ্ছে না। ক্রমেই মহাসড়কে যানবাহন বেড়ে চলেছে। মহাসড়কে যাতে কোনো যানজট সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে তাঁদের তদারকি অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।