ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় এখনো কমেনি বাংলাবাজার ঘাটে

ঈদের ছুটি শেষে সপ্তম দিনেও মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটে কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের ভীড় কমেনিছবি: অজয় কুণ্ডু

ঈদের সপ্তম দিনেও ভিড় কমেনি মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে। সোমবার সকাল থেকে বাংলাবাজার থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়াগামী প্রতিটি ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোটে ছিল কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের ভিড়।

বাংলাবাজার ঘাট থেকে ফেরিতে উঠতে যানবাহনগুলোকে দুই ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ফলে এই নৌপথে ফেরি পারাপারে এসে যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা এখনো দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। তবে শিমুলিয়াগামী মোটরসাইকেলগুলো ঘাট এলাকায় আসার এক ঘণ্টার মধ্যেই ফেরিতে উঠতে পারছে।

সোমবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সরেজমিনে বাংলাবাজার ফেরিঘাটে দেখা যায়, শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ঘাটে আসা প্রতিটি ফেরিই প্রায় যানবাহনশূন্য। ফেরিগুলো ঘাটে আসামাত্রই ঢাকামুখী যাত্রী ও যানবাহনগুলো ফেরিতে উঠতে হুড়োহুড়ি শুরু করে। ঘাটে মোটরসাইকেলের চাপ বেশি থাকায় মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত গাড়িগুলো ফেরিতে ওঠার জায়গা পাচ্ছে না। ফলে মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত গাড়ির চালকদের কমপক্ষে দুই ঘণ্টা ঘাটে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। ঘাটের টার্মিনালে মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত গড়ির দীর্ঘ সারি আছে। এই সারিতে ছোট–বড় কয়েকটি পিকআপ ভ্যানও দেখা গেছে।

খুলনা থেকে আসা ব্যক্তিগত গাড়ির যাত্রী এনায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেরিঘাটে ভিড়লেই মোটরসাইকেল আর কথিত ভিআইপি গাড়ি দিয়ে ফেরির ডেক ভরে যায়। আমাদের সিরিয়াল থেকে প্রতিটি ফেরিতে চার থেকে পাঁচটা গাড়ি তোলা হয়। এ কারণেই ঘাটে আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। বেলা ১০টায় ঘাটে এসে এখন দুপুর ১২টা বাজে। এখনো ফেরিতে উঠতে পারলাম না। এসব পুলিশ ও ঘাট কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই হচ্ছে। তারা দেখেও কিছুই বলছেন না।’

ঢাকামুখী একটি মাইক্রোবাসের এক চালক বলেন, ফেরি ঘাটে ভোগান্তি হবে এটা এখন নিয়ম। শত অনুরোধেও আগে যেতে পারেননি তাঁরা। আর হুট করে কিছু গাড়ি ঘাটে আসামাত্রই ফেরিতে উঠে পড়ছে। এগুলো দেখে এখন অবাক হওয়া ছাড়া আর কিছুই বলার নেই।

অন্যদিকে বাংলাবাজারের লঞ্চ ও স্পিডবোট ঘাটেও ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় আছে। গাদাগাদি করে যাত্রীরা পদ্মা পার হচ্ছেন। প্রতিটি স্পিডবোট ও লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রীর পাশাপাশি বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

বরিশাল থেকে ঢাকামুখী যাত্রী আবুল বাশার বলেন, স্পিডবোট ভাড়া ১৫০ টাকা। এখন ঈদ বলে ২০০ টাকা করে নিচ্ছে। বোটগুলোয় ১২ জন করে নেওয়ার কথা থাকলেও এখন নেয় ১৮ থেকে ২০ জন। লঞ্চগুলোতে আরও বেশি ভিড়। দুর্ভোগ কমাতে বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়েই স্পিডবোটে উঠেছেন তিনি।

লঞ্চে গাদাগাড়ি করে পদ্মা নদী পাড়ি দেন খুলনার সাব্বির আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঘাটে অনেক লঞ্চ আছে। তবুও লঞ্চগুলো গাদাগাদি করে যাত্রী তুলছে। লঞ্চের ভেতরে বসার জায়গা নেই। পুরো পথটি পরিবার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিটিসি) বাংলাবাজার ঘাট সূত্র জানায়, রোববার থেকে ঈদের ছুটি শেষ হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীমুখী যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে। শুক্র ও শনিবার এই নৌপথে যাত্রী ও যানবাহনের উপচে পড়া ভিড় ছিল। এ সময় ঘাটে ফেরি পারাপারে আসা যাত্রী ও চালকদের ছয় থেকে থেকে ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবে গতকাল রোববার থেকে ভিড় কিছুটা কমতে শুরু করলেও এখনো বাংলাবাজার ঘাটে কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের ভিড় আছে। যাত্রী ও যানবাহনের চাপ সামলাতে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ৬টি ফেরি, ৮৭টি লঞ্চ ও দেড় শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করছে।

বিআইডব্লিটিসি বাংলাবাজারের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সালাউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ঘাটে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় কমেছে। এখন আর উপচেপড়া ভিড় নেই। ঘাটে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই যানবাহন ফেরিতে উঠতে পারছে।
ভিআইপি গাড়ি পারাপারের বিষয়ে তাঁর জানা নেই মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, ভিআইপির কোনো সুবিধা ঘাটে চালু নেই। তাঁরা নিয়ম মেনেই ফেরিতে যানবাহন তুলছেন। এখানে সমস্যা হলো শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে ফেরিগুলো গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। তাই শিমুলিয়া থেকে ফেরিগুলো আসতে দেরি করছে। আর এ কারণে কিছু সময় বাংলাবাজার ঘাটে যানবাহনের বেশি দেখা যায়।