ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ, বৈরী আবহাওয়ায় দুর্ভোগ

ফেরি ও ঘাট–স্বল্পতায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া বৃষ্টি যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। দৌলতদিয়া ফেরিঘাট সড়ক, ৬ ডিসেম্বর দুপুর
ছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ অব্যাহত রয়েছে। তবে ফেরি ও ঘাট–স্বল্পতায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে।

দৌলতদিয়া প্রান্তে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রায় চার কিলোমিটার লম্বা লাইনে গাড়ি রয়েছে। দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’–এর প্রভাবে বৃষ্টিতে যানবাহনের যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ বেড়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় জানায়, দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া নৌপথ দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন করতে ছোট-বড় ২০টি ফেরি চালু রাখা হয়। অধিকাংশ ফেরি অনেক পুরোনো হওয়ায় ইঞ্জিন দুর্বলতাসহ নানা ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় এক মাস আগে চারটি রো রো (বড়) ফেরি মেরামতের জন্য ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়। বাকি ১৬টি ফেরি থাকলেও প্রায় প্রতিদিন এক-দুটি যান্ত্রিক ত্রুটিতে বসে থাকছে। গত শনিবার সকালে যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য রো রো ফেরি কেরামত আলী বিকল হয়। ওই দিন সন্ধ্যার পর যান্ত্রিক ত্রুটিতে আরেকটি রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনও বিকল হয়। ফেরি দুটি পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানা মধুমতিতে রাখা হয়েছে। বর্তমানে ১৪টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার হচ্ছে।

এদিকে দৌলতদিয়ার মোট সাতটি ঘাটের মধ্যে প্রায় তিন বছর ধরে ১ ও ২ নম্বর ঘাট বন্ধ রয়েছে। বাকি পাঁচটি ঘাট থাকলেও নাব্যতা–সংকটে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ৬ নম্বর ঘাটটি বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ৩, ৪, ৫ ও ৭ নম্বর এ চারটি ঘাট সচল রয়েছে। ফেরি–স্বল্পতার পাশাপাশি দৌলতদিয়ায় ঘাট–স্বল্পতাও রয়েছে। সচল হওয়া প্রতিটি ঘাটের কাছে পানি কমে যাওয়ায় ঘাটের সংযোগ সড়কের পকেট পথগুলো নিচু হয়ে গেছে। ফলে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে দুই দিন ধরে বৃষ্টিতে প্রতিটি ঘাটের সংযোগ সড়কে কাদাপানি জমে অতিরিক্ত পিচ্ছিল হয়েছে। এতে ফেরিতে যানবাহন ওঠানামা ব্যাহত হচ্ছে। ফেরিতে গাড়ি লোড-আনলোডে দীর্ঘ সময় ব্যয় হচ্ছে।

আজ সোমবার দুপুরে দেখা যায়, দৌলতদিয়া প্রান্তে ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কের প্রায় চার কিলোমিটারজুড়ে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, কার্ভাড ভ্যানের লম্বা লাইন। এ ছাড়া ফেরিঘাট থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার পেছনে গোয়ালন্দ মোড় রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক সড়কেও প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা লাইনে পণ্যবাহী গাড়ির সিরিয়াল রয়েছে। ফেরির নাগাল পেতে এসব গাড়িকে এক-দুই দিন করে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

খুলনা থেকে আসা দূরপাল্লার পরিবহন রয়েল এক্সপ্রেসের যাত্রী রবিউল ইসলাম জানান, গতকাল রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে তাঁরা দৌলতদিয়া ঘাট থেকে প্রায় চার কিলোমিটার পেছনে যানজটে আটকা পড়েন। রাত শেষে আজ দুপুর ১২টা বাজলেও এখনো তাঁরা ফেরির নাগাল পাননি। তাঁদের মতো এ রকম অনেক গাড়িই লাইনে আটকা রয়েছে। দীর্ঘক্ষণ গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে, বৃষ্টির কারণে গাড়ি থেকে কেউ নামতেও পারছেন না। এ অবস্থায় শিশু ও নারীরা বেশি কষ্টের মধ্যে আছেন।


যশোর থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা করে গত শনিবার বিকেলে গোয়ালন্দ মোড় এসে পৌঁছি। এ সময় পুলিশ আমাদের আটকে দেয়। এক দিন থাকার পর গতকাল সন্ধ্যার দিকে দৌলতদিয়া ঘাটের দিকে ছেড়ে দিলেও ঘাট থেকে তিন কিলোমিটার পেছনে আছি। আজও ফেরিতে উঠতে পারিনি। বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি বেশি খারাপ হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক জামাল হোসাইন জানান, বৃষ্টি আটকে থাকা যানবাহন চালক ও যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিটি ফেরিঘাটের সংযোগ সড়কসহ পন্টুন অতিরিক্ত পিচ্ছিল হওয়ায় ফেরিতে লোড-আনলোডে অনেক সময় লাগছে। এ ছাড়া ফেরি ও ঘাট–স্বল্পতা রয়েছে।