তদন্তে পানি দেওয়ায় অনিয়ম পেয়েছে কমিটি

কৃষক অভিনাথ মারানডির মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীর নিমঘটু গ্রামে
ফাইল ছবি

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে দুই কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটিই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। দুটি তদন্তেই বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে সেচ দেওয়ায় অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়েছে। তবে দুই কৃষকের আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে সরাসরি কিছু বলা হয়নি।

একটি তদন্ত করেছে কৃষি মন্ত্রণালয় ও অপর তদন্তটি করেছে বিএমডিএ। গতকাল রোববার বিকেলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব সায়েদুল ইসলামের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। আজ সোমবার দুপুরে কমিটির প্রধান ও মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং) আবু জুবাইর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে বিএমডিএর প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ জানায়নি সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি।

আরও পড়ুন

মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বিএমডিএর ঈশ্বরীপুর-২ গভীর নলকূপের অপারেটরের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, দুর্ব্যবহার এবং অতিরিক্ত টাকা আদায়েরও অভিযোগ উঠে এসেছে। তবে ওই দুই কৃষকের মৃত্যু সম্পর্কে প্রতিবেদনে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। প্রতিবেদনে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে তদারকির অভাবের বিষয়টি এসেছে। সেই সঙ্গে কিছু সুপারিশও করা হয়েছে।

দুই কৃষকের মৃত্যুর বিষয়ে প্রতিবেদনে কোনো মন্তব্য না করার ব্যাপারে আবু জুবাইর হোসেন বলেন, এটা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া বলা যায় না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তবে দুজনের পরিবার যে অভিযোগ করছে, তা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে আছে। পাশাপাশি এলাকার অন্য কৃষকদের বক্তব্যও আছে।

আরও পড়ুন

একই ঘটনায় বিএমডিএও আলাদা একটি তদন্ত কমিটি করেছিল। সেই প্রতিবেদন তৈরির পর সুপারিশের ভিত্তিতে গতকাল রোববার অপারেটর সাখাওয়াতকে স্থায়ী বরখাস্ত করা হয়। বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, ‘তদন্তে কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে।’ কী অনিয়ম—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১২৫ টাকা ঘণ্টার পানিতে ১৩৫ টাকা নিতেন অপারেটর।

বিএমডিএ চেয়ারম্যান ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি রাজশাহীতে ফেরার পর প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরা হবে বলে জানান আবদুর রশীদ।

গত ২৩ মার্চ গোদাগাড়ীর নিমঘটু গ্রামের সাঁওতাল কৃষক অভিনাথ মারান্ডি (৩৭) ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি (২৭) বিষপান করেন। এতে অভিনাথ সেদিনই মারা যান। রবি মারা যান ২৫ মার্চ।

আরও পড়ুন

পরিবারের দাবি, নলকূপের অপারেটর ও ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি সাখাওয়াত এই দুই কৃষকের বোরো ধানের জমিতে পানি না দিয়ে হয়রানি করছিলেন। পানি না পেলে তাঁরা বিষপানের হুমকি দিয়েছিলেন। অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনও তাঁদের বিষ পান করতেই বলেছিলেন। এরপর তাঁরা দুজনে গভীর নলকূপের সামনেই বিষপান করেন। দুই কৃষক বিষপানের পর রাতে তাঁদের জমিতে পানি দিয়েছিলেন সাখাওয়াত।

২ এপ্রিল দিবাগত রাতে পুলিশ সাখাওয়াতকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন বিএমডিএ সাখাওয়াতকে চাকরিচ্যুত করে। এদিন সাখাওয়াতকে আদালতে হাজির করে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। আদালত সাখাওয়াতকে কারাগারে পাঠালেও সেদিন রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়নি।