তর সইছে না, তাই মাওয়ায় ভিড়

স্বপ্নের সেতু সামনে থেকে দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় ভিড় করছেন অনেকে। সেতু পেছনে রেখে ক্যামেরাবন্দী হয়েছেন অনেকে। কেউবা ট্রলারে চেপে মাওয়া থেকে জাজিরা পর্যন্ত গিয়ে পুরো সেতু দেখেছেন। লৌহজংয়ে আনন্দ শোভাযাত্রা।

স্বপ্নের পদ্মা সেতুটি একনজর দেখতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছুটে এসেছেন দর্শনার্থীরা। এ সময় সেতু পেছনে রেখে ক্যামেরাবন্দী হয়েছেন অনেকে। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া মৎস্য আড়তঘাট এলাকায় ১১ ডিসেম্বর বিকেলেছবি: ফয়সাল হোসেন

পদ্মা সেতু এখন বাস্তবের খুব কাছাকাছি। তাই তো স্বপ্নের সেতুটি সামনে থেকে দেখতে আজ শুক্রবার ছুটির দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় ভিড় করেছিলেন অনেকে। পদ্মা সেতু কাছ থেকে দেখে, ছবি তুলে আনন্দে ভেসেছেন তাঁরা।

এদিকে পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হওয়ায় আজ মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। পদ্মা সেতুর ৪১তম ও সর্বশেষ স্প্যান বসানো হয় গতকাল বৃহস্পতিবার। এর মাধ্যমে নদীর ওপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের সেতুটি পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়।

মাওয়ায় শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সরেজমিন দেখা যায়, পদ্মা সেতু দেখতে মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের পাশে মাওয়া মৎস্য আড়তঘাটে দর্শনার্থীদের ভিড় জমেছে। দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেলসহ নানা যানবাহনে করে আসছেন। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউবা বন্ধুদের সঙ্গে এসেছেন স্বপ্নের সেতুটি একনজর দেখতে। এ সময় অনেকেই সেতু পেছনে রেখে সেলফি তোলেন।

কেউ আবার শুধুই পদ্মা সেতু ক্যামেরাবন্দী করছিলেন। পদ্মা নদীর পাড় ঘুরে সৌন্দর্য উপভোগ করতেও দেখা গেছে অনেককে। ট্রলার ও স্পিডবোটে করে পদ্মা সেতুর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তেও যেতে দেখা গেছে অনেক দর্শনার্থীকে।

সেতু পেছনে রেখে বন্ধুদের নিয়ে ছবি তোলেন কেউ কেউ। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া মৎস্য আড়তঘাট এলাকায় ১১ ডিসেম্বর বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

ইতু সরকার নামের এক দর্শনার্থী বলেন, তাঁর বাড়ি মাদারীপুর। তবে থাকেন ঢাকার কেরানীগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতে। পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হওয়ার পর সেতুটি দেখতে তর সইছিল না তাঁর। তাই সকালেই স্বামীর সঙ্গে মাওয়ায় চলে এসেছেন। মুচকি হেসে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন পর এ সেতু দিয়েই বাড়ি যাব।’

পদ্মা সেতু দেখতে আসা আরও কয়েকজন জানান, এর আগে কেবল সংবাদপত্রের পাতায় আর টেলিভিশনে পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানো দেখেছেন। বাস্তবে সেতুটি একনজর দেখতে চলে এসেছেন মাওয়ায়।

গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, পদ্মা সেতু একসময় স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন আজ সত্যি হয়েছে। সেতুর সর্বশেষ স্প্যানটি বসানো নিজ চোখে দেখার ইচ্ছা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। তাই স্প্যান বসানোর পরদিন, শুক্রবার ছয় বন্ধু মিলে চলে এসেছেন পদ্মার পাড়ে।

ট্রলার দিয়ে ঘুরে সেতুর মাওয়া প্রান্ত থেকে জাজিরা প্রান্ত পর্যন্ত পুরো সেতু দেখছেন রাজধানীর মিরপুর-১–এর বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সেতুর পিলার, স্প্যান ও গভীর পদ্মা কাছ থেকে দেখলাম। যে আনন্দ অনুভব করছি, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। বিকেল পর্যন্ত এখানেই থাকব। রাতে মাওয়ায় ইলিশ খেয়ে বাড়ি ফিরব।’

শামীম আহমেদ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেখতে প্রতিদিন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, কুমিল্লা, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ আসছেন। এত মানুষ এর আগে কখনো দেখা যায়নি এই এলাকায়। মানুষের সমাগমে এলাকায় ঈদের মতো মনে হচ্ছে।

দর্শনার্থী বহনকারী ট্রলারের চালক গেন্দু সরদার বলেন, এক বছর আগেও নছিমন চালাতেন তিনি। পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলার পাশাপাশি এই এলাকায় মানুষের ভিড়ও বাড়তে শুরু করেছে। সেতুটি কাছ থেকে দেখতে অনেকেই বেড়াতে আসছেন।

এ জন্য ট্রলারের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই নছিমন ছেড়ে ট্রলার চালাতে শুরু করেছেন তিনি। আয় ভালোই হচ্ছে।

পুরো সেতু দেখতে ট্রলারে করে পদ্মার এপার থেকে ওপারে যান অনেক দর্শনার্থী। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া মৎস্য আড়তঘাট এলাকায় ১১ ডিসেম্বর দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

পদ্মা সেতুর সার্ভিস এরিয়ার নিরাপত্তাকর্মীদের একজন গিয়াসউদ্দিন। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগেও এখানে দর্শনার্থীদের ভিড় কম ছিল। পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানোর পর থেকে দর্শনার্থীদের ভিড় যেন উপচে পড়ছে।

এদিকে পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হওয়ায় মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে শুক্রবার আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে উপজেলা যুবলীগ। বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-মাওয়া-শিমুলিয়া ঘাট সড়কের শিমুলিয়া ভাঙা মোড় পর্যন্ত শোভাযাত্রা হয়। এ সময় ‘পদ্মা সেতুর রূপকার, শেখ হাসিনা সরকার’ স্লোগান দেওয়া হয় শোভাযাত্রা থেকে। এরপর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আলমগীর কবির খান ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান খান বক্তব্য দেন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মর্তুজা খান, কুমারভোগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম দেওয়ান, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি কামাল হাওলাদার, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক প্রমুখ।