তরমুজ বিক্রি নিয়ে দ্বন্দ্ব, মীমাংসার নামে ইউপি সদস্যের টাকা ভাগাভাগি

বরগুনা জেলার মানচিত্র

বরগুনার আমতলীতে খেতের তরমুজ বিক্রি নিয়ে দ্বন্দ্ব মীমাংসার নামে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার গাজীপুর পুলিশ ফাঁড়ির এক সহকারী উপপরিদর্শকও (এএসআই) ওই টাকার ভাগ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী এক ব্যবসায়ী।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী, জমির মালিক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার আঠারো গাছিয়া ইউনিয়নের উত্তর সোনাখালী গ্রামের মোস্তফা সরদার এক হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। ওই জমির তরমুজ তিনি গত বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ী আফাজ উদ্দিনের কাছে ৭৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। কিন্তু ব্যবসায়ী আফাজ উদ্দিন খেত থেকে তরমুজ কেটে নেননি। এদিকে মৌসুম প্রায় শেষ হয়ে আসায় তরমুজের প্রচুর চাহিদা বেড়েছে। উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা হন্যে হয়ে তরমুজ খুঁজছেন। এই সুযোগে গত শনিবার মোস্তফা ওই তরমুজখেত শামিম নামের আরেক ব্যবসায়ীর কাছে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। গতকাল রোববার ব্যবসায়ী আফাজ উদ্দিন ওই খেত থেকে তরমুজ কাটতে গিয়ে দেখেন, অন্য একজন তরমুজ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় তিনি তরমুজ কাটতে বাধা দেন। এ নিয়ে আফাজ উদ্দিন গাজীপুর পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ দেন।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, গতকাল সন্ধ্যায় এ ঘটনা নিয়ে মধ্য সোনাখালী গ্রামের খলিল খানের দোকানের সামনে গাজীপুর পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই নাজমুল হোসেনের উপস্থিতিতে ইউপি সদস্য মামুন সিকদার, সোহেল রানা, ফুয়াদ, সবুজ ও খবির নামের পাঁচজন সালিস বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে স্থানীয় শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সালিসে ব্যবসায়ী আফাজকে আসল ৭৭ হাজার টাকাসহ লাভের অর্ধেক ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ফলে জমির মালিক মোস্তফা ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ইউপি সদস্য মামুন সিকদারের হাতে তুলে দেন। তবে ইউপি সদস্য ব্যবসায়ী আফাজকে আসল ৭৭ হাজার টাকার সঙ্গে লাভের মাত্র ১৫ হাজার টাকা দেন। অবশিষ্ট টাকার মধ্যে মোস্তফাকে ৩০ হাজার, এএসআই নাজমুলকে ১০ হাজার এবং বাকি টাকা ইউপি সদস্য মামুন সিকদার নিয়ে যান। অপর সালিসকারী সোহেল রানাকে দুই হাজার টাকা দিতে চাইলেও তিনি এ টাকা নেননি বলে দাবি করেছেন।

ব্যবসায়ী আফাজ উদ্দিন বলেন, গাজীপুর পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই নাজমুল হোসেন, ইউপি সদস্য মো. মামুন সিকদার, সোহেল রানা, ফুয়াদ, সবুজ ও খবির নামের ছয়জন সালিস বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে তাঁকে তরমুজ না দিয়ে আসল ৭৭ হাজার এবং লাভের অর্ধেক ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু ইউপি সদস্য মামুন সিকদার তা না দিয়ে মূল টাকার সঙ্গে মাত্র ১৫ হাজার টাকা দেন। এখন ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

সালিসকারীদের একজন সোহেল রানা বলেন, ব্যবসায়ী আফাজ উদ্দিনকে আসল ৭৭ হাজার এবং লাভের অর্ধেক ৪৬ হাজার ৫০০ টাকাসহ মোট ১ লাখ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু ইউপি সদস্য মামুন সিকদার তাঁকে আসল ৭৭ হাজার টাকার সঙ্গে লাভের ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

তরমুজখেতের মালিক মোস্তফা সরদার বলেন, তরমুজ বিক্রি নিয়ে দ্বন্দ্ব সালিস বৈঠকে মীমাংসা হয়েছে। ইউপি সদস্য মামুন সিকদার তাঁকে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু আরও টাকা দেওয়ার কথা ছিল, তা দেননি।

ভাগাভাগির ১০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে গাজীপুর পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই নাজমুল হোসেন দাবি করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। ইউপি সদস্য মামুন সিকদারও টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, সালিস বৈঠকে বিষয়টির সমাধান হয়েছে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এক ব্যবসায়ীর কাছে আগে তরমুজ বিক্রি হয়েছিল। পরে বেশি দামে আরেকজনের কাছে তরমুজ বিক্রি করা হয় এমন অভিযোগে এক ব্যক্তি তাঁকে ফোন করেছিলেন। এটি একটি প্রতারণা। তিনি স্থানীয়ভাবে এটির সমাধান করতে বলেছেন। না হলে লিখিত অভিযোগ করতে বলেছেন। এরপর আর ওই ব্যক্তি তাঁকে এ বিষয়ে কিছু জানাননি।

এ বিষয়ে আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম হাওলাদার বলেন, তরমুজ বিক্রি নিয়ে একটি ঘটনা শুনেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।