তরুণীর ছবি ঘিরে ‘সমাজচ্যুতির’ ঘটনায় মসজিদ কমিটির মুচলেকা

মৌলভীবাজার জেলার মানচিত্র

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বিদেশে পড়তে যাওয়া তরুণীর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করা নিয়ে ‘সমাজচ্যুতির’ ঘটনায় মুচলেকা দিয়েছে স্থানীয় মসজিদ কমিটি। প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এ বিষয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে স্থানীয় মসজিদ কমিটির লোকজন ভবিষ্যতে আর এ ধরনের কাজ না করার ব্যাপারে লিখিত মুচলেকা দিয়েছেন।

উপজেলা প্রশাসন ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত আটটার দিকে বৈঠক শুরু হয়। এ সময় সেখানে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী, কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিনয় ভূষণ রায়, পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম, ভাটেরা ইউপির চেয়ারম্যান এ কে এম নজরুল ইসলাম, ভাটেরা বাজার মসজিদ কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া, সম্পাদক আমিন মিয়া, তরুণীর বাবা আবদুল হাই চৌধুরীসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। রাত ১০টার দিকে বৈঠকটি শেষ হয়।

ইউএনও এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক প্রবীণ মানুষ। ইন্টারনেট, ফেসবুক সম্পর্কে তাঁদের কোনো ধারণা নেই। তবে ফেসবুকে তরুণীর ছবি দেখে এলাকার কিছু লোক আপত্তিকর কথাবার্তা রটাচ্ছিলেন। এসব কথা তাঁদের কানে যায়। তাই বিষয়টি জানতে তাঁরা তরুণীর বাবাকে মসজিদে ডেকেছিলেন। তরুণীর বাবা না যাওয়ায় মসজিদ কমিটি তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়।

আরও পড়ুন

ইউএনও বলেন, কমিটির লোকজন পরোক্ষভাবে তাঁদের দোষ স্বীকার করেছেন। তাঁরা এ কাজের জন্য অনুতপ্ত হয়েছেন। ভবিষ্যতে তাঁরা এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড চালাবেন না বলে লিখিত মুচলেকা দিয়েছেন। তরুণীর বাবাও বৈঠকের ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। উভয় পক্ষ পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি করেছে। পরে মসজিদ কমিটির লোকজন তরুণীদের বাড়িতেও যান।

উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হাই চৌধুরীর বড় মেয়ে নুরুননাহার চৌধুরী সিলেট নগরে অবস্থিত মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক পাস করেন। তিনি ২০০৮ সাল থেকে ‘পজিটিভ জেনারেশন অব সোসাইটি বাংলাদেশ’ নামের একটি সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। বর্তমানে তিনি ওই সংগঠনের সমন্বয়ক। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর নুরুননাহার উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে অবস্থানরত একই সংগঠনের চেয়ারম্যান ও নুরুননাহারের শিক্ষক একই এলাকার বাসিন্দা জয়তূর্য চৌধুরী বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। পরে জয়তূর্য নুরুননাহারের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা জানিয়ে ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেন। ওই ছবি ঘিরে ২৮ জানুয়ারি ভাটেরা বাজার মসজিদ কমিটি নুরুননাহারের পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেয়। এ বিষয়ে তরুণীর বাবা ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।