তরুণের বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল

সালমান খান

সালমান খান (২৭) পরিবারের অভাব–অনটন দূর করতে স্বপ্ন দেখেন বিদেশ যাওয়ার। পরিবারের আয়ের উৎস না থাকায় বিদেশে যাওয়ার টাকা জোগাড় করতে নিজেই নামেন কাজে। যোগ দেন এনা পরিবহনের সুপারভাইজার পদে। তিন বছর ধরে তিলে তিলে সঞ্চিত টাকা দিয়ে সৌদি আরব যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।

পরিবারের লোকজনকে সালমান জানিয়েছিলেন, অল্প কিছু দিনের মধ্যে বিদেশ চলে যাবেন। তাঁর অদম্য চেষ্টায় আশাবাদী হয়ে ওঠেন পরিবারের লোকজন। কিন্তু গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের রশিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় সব স্বপ্ন নিমেষেই ভেঙে যায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের আশারকান্দি ইউনিয়নের মিঠাভরাং গ্রামের এই তরুণের। এতে তিনি নিহত হন।

গতকাল বিকেল সোয়া ৫টার দিকে জানাজা শেষে গ্রামের পঞ্চায়িতী কবরস্থানে সালমানকে দাফন করা হয়।

সালমানের বাবা আলীবর খান শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ছেলেটি পরিবারের উন্নতির জন্য বিদেশ যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিল। সব ঠিকঠাক করেছিল। তার এমন মৃত্যু সহ্য করতে পারছি না। বিদেশে টাকা জোগাড় করার পাশাপাশি সংসারের খরচেও সে সহায়তা করত।

পুলিশ, এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা জানান, উপজেলার মিঠাভরাং গ্রামের আলাউর রহমান খানের ছেলে সালমান খান প্রায় ৩ বছর ধরে এনা পরিবহনে সুপারভাইজার পদে নিয়োজিত ছিলেন। শুক্রবার ভোরে এনা পরিবহন বাসে সিলেট থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন তিনি। বিপরীত দিক থেকে অপর একটি বাস ঢাকা থেকে সিলেট আসছিল। সকাল পৌনে সাতটার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার রশিদপুরে একটি পেট্রলপাম্পের কাছে বাস দুটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সালমান খানসহ আটজন প্রাণ হারান। বিকেলে গ্রামের বাড়িতে তাঁর লাশ এসে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদায়ক দৃশ্যের অবতারণা হয়। জানাজা শেষে তাঁকে পঞ্চায়িতী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সালমান খানের ভাই আবদুস সামাদ খান বলেন, ‘এনা পরিবহনে আমার ভাই সালমান কাজ করছিলেন। তাঁর জমানো টাকা দিয়ে সম্প্রতি সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছিল বলে আমাদের জানিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে আমরা দিশেহারা। চার ভাই ও বাবা নিয়ে তাঁদের ৫ সদস্যের পরিবারে সালমান খান ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান।’
স্থানীয় আশারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ আবু ইমানী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় তরুণের অকালমৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শুনেছি নিহত তরুণ বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সড়কে যাতে আর কোনো স্বপ্ন শেষ না হয়, এটাই আমাদের চাওয়া।

জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রশিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আটজনের মধ্যে সালমান জগন্নাথপুর উপজেলার এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাঁর লাশ দাফন করা হয়েছে।