তর্কের পর ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ

লালমনিরহাটে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের সঙ্গে তর্কাতর্কির পর এক বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে এক সাংবাদিককে  বেধড়ক মারপিটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জাহাঙ্গীর আলম শাহীন (৪৮) নামের ওই সাংবাদিককে হাতকড়া পরিয়ে কোমরে দড়ি বেঁধে ছবি তোলার পর থানায় সোপর্দ করেছে ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীন কুলাঘাট বিজিবি ক্যাম্প।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের রতনাই বেইলি সেতু এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) ও দৈনিক জনকণ্ঠের লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি। তিনি মহিষখোচা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক হিসেবেও কর্মরত। জাহাঙ্গীর লালমনিরহাট পৌরসভার খোর্দসাপটানা মৌজার ঈমানগঞ্জ গ্রামের আবদুস সালামের বড় ছেলে।

লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহা আলম সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলমকে মাদকসংক্রান্ত বিজিবির দায়ের করা একটি মামলার বিপরীতে থানায় সোপর্দ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ শুক্রবার দুপুরে জাহাঙ্গীর আলমকে লালমনিরহাটের সংশ্লিষ্ট আদালতে সোপর্দ করা হয়। এরপর আদালত করোনা সংকটকাল ও আঘাতজনিত অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য জামিন মঞ্জুর করেছেন।

জাহাঙ্গীর আলমের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কুলাঘাট ক্যাম্পের ইনচার্জ হাবিলদার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা তাঁকে মারধর করিনি। তিনি আটকের সময় হাত ঝটকাঝটকি করে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় ধস্তাধস্তিতে হয়তো তাঁর আঘাত লেগে থাকতে পারে।’ ঘটনার বিষয়ে আনোয়ার হোসেনের ভাষ্য, তাঁরা রতনাই বেইলি সেতু এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন। এ সময় জাহাঙ্গীর আলম মোটরসাইকেলে লালমনিরহাট শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। সেখানে তাঁকে থামানো হয়। এরপর তাঁকে তল্লাশি করে এক বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল পাওয়া যায়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তাঁকে লালমনিরহাট সদর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে।

এদিকে বিজিবির পক্ষ থেকে ঘটনাটি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ৪৫ মিনিটের দাবি করা হলেও জাহাঙ্গীর আলমের বরাত দিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন, তাঁকে রতনাই বেইলি সেতুর কাছে আটকের ঘটনাটি ঘটেছে রাত সাড়ে নয়টায়।

পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, বিজিবির সদস্যদের সঙ্গে জাহাঙ্গীর আলমের তর্ক হয়। এর জের ধরে তাঁকে কুলাঘাট ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যরা বেধড়ক মারপিট করেন, পরে তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে, কোমরে দড়ি বেঁধে সদর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এর আগে এক বোতল ফেনসিডিল টেবিলের ওপর রেখে হাতকড়া ও কোমরে দড়ি বেঁধে ছবি তোলা হয়েছে। বিজিবির তোলা এসব ছবি বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা জুয়েল রানা সাংবাদিক জাহাঙ্গীরের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আঘাতগুলো তাজা বা সাম্প্রতিক সময়ের বলে মনে হয়েছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিজিবির হাবিলদার আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন বিজিবি সদস্য সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলমকে শুক্রবার সকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন এবং তাঁকে পরে তাঁরা নিয়ে যান।’

ঘটনার বিষয়ে লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কাউকে তাঁর পরিচয় দিয়ে বিবেচনা করি না। মাদকের ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি আমরা অনুসরণ করে থাকি। যেহেতু মাদকসহ তাঁকে আটক করা হয়েছে, তাই তাঁর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, জাহাঙ্গীর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কুলাঘাট বেইলি সেতুর কাছে বিজিবির টহল দলকে কোনোভাবেই সহযোগিতা করেননি, বরং যখন বিজিবি তাঁর মোটরসাইকেলটি তল্লাশি করতে চান, তখনই তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। মাদকসহ যে–ই ধরা পড়ুক না কেন, তিনি তখন নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। এ ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর আলমও একই দাবি করে থাকতে পারেন।

সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলমে স্ত্রী রেবেকা শাহীন বলেন, ‘আমার স্বামী পেশাগত প্রয়োজনে ওদিকে গিয়েছিলেন, তাঁকে আটকের সময় তাঁর সঙ্গে আরেকজন ছিলেন, বিজিবি তাঁকে ছেড়ে দিয়ে আমার স্বামীকে মারপিট করে হাতকড়া পরিয়ে, কোমরে দড়ি বেঁধে এক বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে থানায় দিল। আমি এর সঠিক তদন্ত ও দায়ী বিজিবি সদস্যদের উপযুক্ত বিচার চাই।’