তাঁদের স্বপ্ন ভেঙেছে শিলাবৃষ্টি

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার শাহপাড়া গ্রামে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত গমখেত দেখছেন কৃষক মোশারফ হোসেন
ছবি: প্রথম আলো

শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে উঠতি ফসল, ভেঙে গেছে স্বপ্ন। এই ধকল কেমনে সামলাবেন, কীভাবে সংসারের ব্যয় বহন করবেন, সেই হিসাব মেলাতে পারছেন না রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক কৃষক। গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এই শিলাবৃষ্টি হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চার-পাঁচ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে গঙ্গাচড়ার বেতগাড়ি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে মাঠে লাগানো গম, তামাক ও ভুট্টাখেতের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে আমের মুকুলেরও। ওই ইউনিয়ন পরিষদের আদর্শপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ। গম, তামাক ও ভুট্টাখেত যেন ধ্বংসযজ্ঞ। শিলা কৃষকদের স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে।

আদর্শপড়া গ্রামের কৃষক শাহাবুল ইসলাম বলেন, ‘গত শুক্রবার বিকেলে আকাশ হঠাৎ কালো মেঘে ঢেকে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি হয়। মিনিটখানেক পর শুরু হয় পাথর (শিলা) পড়া। তাতে মাঠে থাকা তামাক, গম, ভুট্টা সব শেষ করে দেয়। পাথরের আঘাতে ঘরের টিন পর্যন্ত ছিদ্র হয়ে যায়। নষ্ট কাঁচা গমগাছ কেটে এখন গরুকে খাওয়াচ্ছি।’ ওই গ্রামের কৃষক রানু বেগম বলেন, ‘পাথর মোর ৩২ শতক মাটির তামাক নষ্ট করি দিছে। এ্যালা হতাশ হওয়া ছাড়া করার কিছু নাই। আল্লাহর সঙ্গে তো যুদ্ধ করা যায় না।’

শাহপাড়া গ্রামের কৃষক মোশারফ হোসেন বলেন, তাঁর জীবনে এত শিলাবৃষ্টি দেখেননি। মাঠের গম, তামাক ও ভুট্টাখেত চার-পাঁচ মিনিটের পাথর কীভাবে নষ্ট করেছে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করানো মুশকিল।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার শাহপাড়া গ্রামে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত তামাকখেত দেখছেন কৃষক মোশারফ হোসেন
ছবি: প্রথম আলো

জুম্মাপাড়া গ্রামের কৃষক শাহ আলম বলেন, তাঁর বর্গা নেওয়া ৩৭ শতকে লাগানো তামাকখেত পাথরের আঘাতে মাটিতে মিশে গেছে। এই তামাক তুলে বিক্রি করে জমিতে তিনি বোরো লাগাতেন। এখন সব আশাই শেষ। তামাক নষ্ট হলেও জমির মালিককে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। ধান আবাদ করতে না পারলে খাবেন কী, জমির মালিককে টাকা দেবেন কীভাবে। দুশ্চিন্তায় রাতে তাঁর ঘুম আসে না।

আমনগর গ্রামের কৃষক ছায়েদ আলী বলেন, ‘৭৫ শতক জমি বর্গা নিছি ২১ হাজার টাকায়। তামাক নাগাচি। আবাদটাও খুব ভালো হইছেলো। আবাদোত খরচ হইচে ৩৬ হাজার টাকা। আশা করচেনো তামাক বেচেয়া নয়া জামাইক একটা মটরসাইকেল কিনি দেইম। পাথরে সউগ শ্যাষ করি দেচে। গরিবের আশাও টেকে না। এবার সংসার চলবে কেমন করি; জমির মালিকোক টাকা কোনটে থাকি দেইম। সেই চিন্তা করি কুল পাওচু না।’

ওই দিনের শিলাবৃষ্টি একইভাবে স্বপ্ন ভঙ্গ করে দিয়েছে তামাকচাষি আদর্শপাড়া গ্রামের কৃষক নুর আলম, মেনহাজুল ইসলাম, কালাম হোসেন, আবদুল খালেক, মোহসেন আলীসহ অনেকের। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিলার আঘাতে ওই ইউনিয়নের ওই গ্রামগুলোসহ ১০-১২টি গ্রামের পাঁচ শতাধিক কৃষকের গম ভুট্টা, তামাকখেত সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে গেছে।

অবশ্য কৃষকের দেওয়া ওই ক্ষতির পরিসংখ্যানের সঙ্গে একমত নন ওই ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান। মুঠোফোনে আজ দুপুরে তিনি বলেন, ‘ইউনিয়নের ছয়-সাতটি গ্রামের মাঠে থাকা গম, তামাক, ভুট্টার আবাদ সম্পূর্ণরূপে শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে। এখানে তামাকের চাষ বেশি। কিন্তু সেটা ক্ষতি আকারে আমরা দেখাতে চাই না। তবে খতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ১৫০ জন।’