তাঁর অবৈধ উপার্জন ৬ কোটি টাকা

নাসির উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে দুদক

পেশায় তিনি দলিল লেখক। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানও হয়েছেন। দুই স্ত্রী, শ্যালক ও ছেলের নামে খোলা ব্যাংক হিসাবে আছে একাধিক স্থায়ী আমানত (এফডিআর)। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের সিমলা-রোকনপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন চৌধুরী নামের এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

অবৈধ উপায়ে প্রায় ছয় কোটি টাকা উপার্জনের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।

দুদকের হয়ে গত নভেম্বরে মামলাটি করেন দুদক যশোর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোশারফ হোসেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে আগামী ৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। নাসির চৌধুরী কালীগঞ্জ উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক ও দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। পাশাপাশি তিনি সিমলা-রোকনপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।

নাসির উদ্দিন চৌধুরী ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মোট ৭টি এফডিআরে ১ কোটি ৭৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা জমা করেছিলেন।

দুদকের সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের সাবেক সহকারী পরিচালক শহিদুল ইসলাম এই দলিল লেখকের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলোর তদন্ত করেন। তাঁর তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে হওয়া মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন অবৈধ উপায়ে ৫ কোটি ৭০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা উপার্জন করেছেন। এগুলো লেনদেনের জন্য তিনি নিজ নামে ব্র্যাক ব্যাংকের যশোর শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব ও ১২টি এফডিআর হিসাব খোলেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নাসির উদ্দিন চৌধুরী ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মোট ৭টি এফডিআরে ১ কোটি ৭৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা জমা করেছিলেন। ২০১৫ সালে ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে একই ব্যাংকে প্রথম স্ত্রী খাদিজা বেগমের সঞ্চয়ী হিসাব নম্বরে স্থানান্তর করেন। ব্যাংকটিতে খাদিজা বেগমের নামে একটি সঞ্চয়ী ও পাঁচটি এফডিআর হিসাব ছিল। এগুলো থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১ কোটি ২৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা উত্তোলন করেন নাসির।

মামলা হওয়ার বিষয়টি জানা নেই, তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবো না।
নাসির উদ্দিন চৌধুরী

একই ব্যাংকে দ্বিতীয় স্ত্রী মাহফুজা খাতুনের নামে একটি সঞ্চয়ী হিসাব ও চারটি এফডিআর খুলে অর্থ লেনদেন করেন। বর্তমানে এগুলো চলমান নেই। দ্বিতীয় স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে দুদক নিশ্চিত হয়েছে অভিযুক্ত নাসির চৌধুরী তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর সঞ্চয়ী হিসাবে টাকা জমা করে সেখান থেকে এফডিআরে স্থানান্তর করতেন। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি দ্বিতীয় স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা লেনদেন করেন।

এ ছাড়া শ্যালক জিয়াকুব আলীর নামে খোলা ব্র্যাক ও এবি ব্যাংকের হিসাব নম্বরে ৮০ লাখ টাকা জমা করেছিলেন, যা পরে উত্তোলন করে অন্য হিসাব নম্বরে স্থানান্তর করেন। জিয়াকুব আলী বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তাকে নিশ্চিত করেছেন। নাসির উদ্দিন তাঁর কলেজপড়ুয়া ছেলের নামে কালীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকের হিসাব নম্বরেও ৩০ লাখ টাকা জমা করেছিলেন। সে টাকাও পরে অন্য হিসাবে স্থানান্তর করেন।

দুদকের যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক নাজমুছ সাদাত বলেন, তাঁরা দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমতি পেয়ে অভিযুক্ত নাসিরের বিরুদ্ধে তদন্ত ও পরবর্তী সময়ে আদালতে মামলা করেছেন। মামলাটির তদন্ত চলছে, এখনো আসামি গ্রেপ্তার হননি।

তবে গতকাল সোমবার সন্ধ্যার দিকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে নাসির উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মামলা হওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না। মামলায় থাকা অভিযোগগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু মামলা হওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই, তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন না।