তামাটে পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে মুকুল

সবকিছু ঠিক থাকলে রমজান মাসের শেষ ভাগে ইফতারিতে দেখা মিলবে টসটসে রসাল লিচুর জানাচ্ছেন চাষিরা।

লিচুগাছে তামাটে কচি পাতার ফাঁকে উঁকি দিতে শুরু করেছে মুকুল। গতকাল শুক্রবার দিনাজপুরের মাধববাটিতে
ছবি : প্রথম আলো

মাঘের শেষ সময়ে লিচুগাছে মুকুল আসতে শুরু করে। তবে এবার মৌসুমের শুরুতে শীতের প্রকোপ কম থাকা এবং শেষ সময়ে শীত পড়ায় দিনাজপুরে এখনো অধিকাংশ গাছে মুকুল আসেনি। ফাল্গুনের শেষ ভাগে কৃষি বিভাগ জানাচ্ছে, এখনো ৩০ শতাংশ লিচুগাছে মুকুল আসা বাকি। যেসব গাছে মুকুল এসেছে, তাতেও তামাটে কচিপাতার আধিক্য। এই অবস্থায় এবার লিচুর ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবার পরবর্তী আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত মৌসুমের মতোই লিচুতে লাভবান হবেন কৃষকেরা। এবার লিচুর হার্ভেস্টিং সময় আর ঈদুল ফিতর কাছাকাছি সময়ে পড়বে। সবকিছু ঠিক থাকলে রমজান মাসের শেষ ভাগে ইফতারিতে দেখা মিলবে টসটসে রসাল লিচুর, এমনটিই জানাচ্ছেন চাষিরা।

লিচুর রাজ্য বলে দিনাজপুরের খ্যাতি দেশজুড়ে। জেলার ব্র্যান্ডিংও করা হয়েছে লিচু দিয়েই। এ জেলায় চাষ হয় চায়না থ্রি, বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, কাঁঠালি জাতের লিচু। দিনাজপুরের সব এলাকায় কমবেশি লিচুর চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় সদর উপজেলার মাসিমপুর, ঘুঘুডাঙা, বিরলের মাধববাটি, করলা, রবিপুর, মহেশপুর, বটহাট এবং চিরিরবন্দর ও খানসামা উপজেলায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, দিনাজপুরে ৬ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমিতে লিচুবাগান রয়েছে ৫ হাজার ৪১৮টি। আর বসতবাড়ির উঠানসহ বাগানগুলোতে লিচুগাছ রয়েছে ৭ লক্ষাধিক। গত মৌসুমে উৎপাদন ছিল ৩০ হাজার মেট্রিক টন।

গতকাল শুক্রবার বিরল উপজেলার রবিপুর গ্রামের লিচুচাষি শিশির শাহ বলেন, ৩০ একর জমিতে ৮০০ গাছ নিয়ে লিচুবাগান তাঁর। প্রায় সব গাছেই মুকুল-কচিপাতা এসেছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাতার আধিক্য। এই কৃষক জানালেন, গত বছর করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও প্রায় ২৫ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন তিনি।

অন্যদিকে মাসিমপুর এলাকার লিচুচাষি আমিনুল ইসলাম বলেন, ১০০ গাছ নিয়ে একটি বাগান আছে তাঁর। এর বাইরে লিজ নিয়েছেন ১৯০টি গাছের বাগান। এবার আশানুরূপ মুকুল আসেনি। ইতিমধ্যে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। ফল হার্ভেস্টিং করা পর্যন্ত তাঁর ৪ লাখের বেশি টাকা খরচ হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তৌহিদ ইকবাল বলেন, মুকুল ছাড়ার আগে গাছের গোড়ায় পানি দেওয়া হলে কিংবা বিষ প্রয়োগ করলে গাছ কচিপাতা ছাড়ে। মুকুল থেকে গুটি হতে শুরু করলে হপার পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে একবার বিষ প্রয়োগ করতেই হয়। মুকুল দেরিতে এলেও ফলন সন্তোষজনক হবে বলে আশা করছেন তিনি।