রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় এবার টানা বৃষ্টিতে বোরো ধানের খড় শুকাতে না পারায় নষ্ট হয়েছে। আমন ধানের খড়ও পচে যাওয়ায় গো-খাদ্য হিসেবে কাঁচা খড়ের চাহিদা এখন অনেক। এতে আগাম জাতের আমন ধান কেটে কৃষকেরা দ্রুত ধান ছাড়িয়ে কাঁচা খড় বাজারে বিক্রি করছেন। ওই খড় বিক্রি করেই উৎপাদন খরচ উঠাতে পারছেন কৃষকেরা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তারাগঞ্জে গাভির খামার আছে দুই শতাধিক। গরু মোটাতাজাকরণ খামার আছে ৯০টি। পারিবারিকভাবে গরু পালন করা হচ্ছে ৭৫ হাজার ৮৭০টি। এসব পশুকে চার মাস বোরো ধানের ও আট মাস আমন ধানের খড় খাওয়ানো হয়। এবার বোরোর মৌসুমের শুরু থেকে বৃষ্টি হওয়ায় বোরো ধানের খড় কৃষকেরা শুকাতে পারেননি। এতে পচে গেছে বিপুল পরিমাণ খড়। এ ছাড়া আগের মতো বিস্তীর্ণ মাঠ ফাঁকা নেই। এতে দেখা দিয়েছে ঘাসসংকট। মাঠে ফসল লাগানোর আগেই এখন এক ধরনের কীটনাশক দিয়ে আগাছা বা ঘাসের জন্ম প্রতিরোধ করা হয়। এ অবস্থায় আগাম জাতের আমন ধানের কাঁচা খড়ের চাহিদা বেড়েছে। প্রতি আঁটি ১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমন ধানের শুকানো খড়ও খামারিদের কিনতে হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে।
জগদীশপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন বলেন, ‘এবার বাজারোত ধানের চেয়া কাঁচা খড়ের খুব চাহিদা। বাজারোত নিয়া গেইলে মানুষ হুমড়ি খেয়া পড়ে। চোখের পলকে ধানের কাঁচা আঁটি বেচা হয়া যায়। একটা কাঁচা খড়ের আঁটি বেচা হয় ১০ টাকায়।’
পোদ্দারপাড়া গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘মুই ৩০ শতক জমিত এবার বিনা-৭ জাতের ধান নাগাছনু। ধান হইছে ১৮ মণ (২৮ কেজি)। আর কাঁচা আটি পাছুন ৭০০। প্রতি আটি বাড়িত ৮ টাকা করি পাইকারেরটে বেচে পাছুন ৫ হাজার ৬০০ টাকা। মোর ধান চাষ করতে খরচ হইছে ৪ হাজার টাকা। কাঁচা খড় বেচে খরচ বাদেও মোর লাভ থাকিল ১ হাজার ৬০০ টাকা। ধানও ১৮মণ বেচে পাছুন ১১ হাজার ৭০০ টাকা।’
আজ শনিবার ইকরচালী বাজারে কাঁচা খড় কিনতে আসা প্রামাণিকপাড়া গ্রামের গরুর খামারি জিয়ারুল হক বলেন, ‘ভাই মুই এবার বোরোর একনা খড়ও শুকবার সুযোগ পাও নাই। সউগ পানিত পচি গেইছে। আমনের যেকনা খড় আছলো তাকও শেষ। অ্যালা গরু-বাছুর নিয়া খুব বিপদে আছুন। প্রতিদিন বাজার থাকি ১০ টাকা দামে কাঁচা খড়ের আঁটি কিনি গরুক খিলাওছুন।’
ওই বাজারে খড় কিনতে আসা উত্তপাড়া গ্রামের আরেক খামারি মেনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘ভাইজান মোর ছয়টা গরু মোটাতাজা করার একটা খামার আছে। এবার তো খড়োত আগুন লাগছে। কাঁচা খড়ের আঁটি কিনি খিলি কুলবার পাওছুন না। খুব যন্ত্রণায় আছুন। না পাওছুন গরু বেচপার, না পাওছুন ঠিক মতোন খাবার দিবার।’
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিশ্বনাথ সরকার বলেন, চলতি মৌসুমে ২২০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের বিনা-৭, ৭৬, ৩৯, ৫৬ ও হাইব্রিড ধান লাগানো হয় জুন থেকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহজুড়ে। লাগানোর ১২০ দিনের মধ্যে এই ধান কাটা যায়। আর মূল আমন ধান উঠতে সময় লাগে ১৫৫ দিন। এ সময় ঘাসের সংকট থাকে। আমন উঠতে আরও সময় লাগবে। তাই গো-খাদ্য হিসেবে আগাম জাতের ওই ধানের কাঁচা আঁটির চাহিদা বেড়েছে।
তারাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঊর্মি তাবাসুম বলেন, আগাম জাতের ওই ধানের চাষ করে ধান ছাড়িয়ে কাঁচা খড়ের আঁটি বিক্রি করেও কৃষকেরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। বলা যায়, কাঁচা খড়ের আঁটি বিক্রি করেই কৃষকের আবাদ খরচ উঠছে।