তারাগঞ্জে মরিচের কেজি ৩ টাকা

তারাগঞ্জ হাটের পাশে বস্তায় মরিচ ভরতে ব্যস্ত চাঁদখানা গ্রামের ব্যবসায়ী আনিছুল হক ও মিন্টু মিয়া
ছবি: প্রথম আলো

এক মাস আগেও রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২০ টাকায়। কিন্তু সেই মরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩ টাকা কেজিদরে। তবু ক্রেতা মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে হতাশ হয়ে অনেক কৃষক খেত থেকে মরিচ তুলছেন না। অথচ রাজধানী ঢাকার বাজারগুলোতে আকার ও মানভেদে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়।

ইমামগঞ্জ গ্রামের কৃষক একরামুল হক বলেন, ‘বাবা, হামরা সংসার নিয়া টালবাহানার মধ্যে পড়ছি। আবাদ করা মরিচ বিক্রি করি খরচের টাকা তুলার পাওছি না। খালি লস, লস আর লস। এমতোন করি কি সংসার চলা যায়।’

কৃষি বিভাগ, চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারাগঞ্জে ২৯৫ একর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। এক মাস আগেও প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের পাইকারি দর ছিল ২০ টাকা। খুচরা বাজারে ৩৫-৩৬ টাকায় পাওয়া যেত। মাস না ঘুরতেই সেই মরিচ এখন ৩ টাকা কেজিতে ক্রেতা মিলছে না। এতে চাষিদের লাভ তো দূরের কথা মরিচ বিক্রি করে আবাদের খরচই উঠছে না। এ অবস্থায় অনেক চাষি খেত থেকে মরিচ তোলা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে খেতেই নষ্ট হচ্ছে মরিচ।

চিকলী নদীর ধারে ভীমপুর মাঠে লাগানো মরিচখেতের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ভীমপুর গ্রামের মরিচচাষি জোবায়দুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মরিচ তুলি করমো কি? হাটোত মরিচ নিগাইলে বেচা হয় না। হটোত মরিচ নিগা আনা ভ্যান ভড়া পকেট থাকি যায়। ওই জন্য মুই এ্যালা গাছ থাকি মরিচ তোলোছুং না। গাছোতে মরিচ নষ্ট হওছে।’

বিক্রির জন্য মরিচ বস্তায় ভরা হচ্ছে। তারাগঞ্জ হাটের পাশে
ছবি: প্রথম আলো

আলমপুর মাঠে মরিচ তুলতে ব্যস্ত আরেক চাষি নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এবার হামার মরিচ চাষোত লস হইবে। ১০ হাজার টাকা খরচ করি ৩০ শতক জমিত মরিচ লাগাছুন। এক মাস আগোত ২০ টাকা কেজি দরে খালি এক মণ মরিচ বেচার পাছুন। এ্যালা ৩ টাকাতও বেচপার না পাওছুং। ভাবুছুন মরিচখেত চাষ দিয়া ধান নাগে দেইম।’
শুক্রবার তারাগঞ্জ হাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত বছর একই সময় প্রতি কেজি মরিচ ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে কৃষকেরা জানিয়েছেন।

হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসা চাদখানা গ্রামের আলতাফ হোসেন বলেন, ‘হামার খুব দুরবস্থা বাহে। সংসার চালামো কেমন করি। মরিচ নেওছে না। হামার কপালোত যে কি আছে আল্লায় জানে। কষ্ট করি আবাদ করি খালি লসে খাওছি।’

আলতাফের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পারঘাট গ্রামের আরেক কৃষক মমিন মিয়া বলেন, ‘হামরা গরিব মানুষ। মাটি কামড়ে বাঁচি। এক আবাদের ফসল ব্যাচেয়া আরেক আবাদ করি। কিন্তু এ্যালা বাজারোত মরিচের যে দাম, তাতে হামার খরচ উঠোছে না। এমতন করি লস খাইতে থাকলে ছাওয়াগুলোক পড়ামো কেমন করি, খামো কী, আবাদ করমো কি দিয়া?’

এবার আবহওয়া ভালো থাকায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উর্মি তাবাসসুম। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার মরিচ চাষও বেড়েছে। বাজারে মরিচের সরবরাহ বেশি হওয়ায় দরপতন হয়েছে।