ইউনিয়নোত ব্যাংক থাকলে এমতোন কষ্ট হইল না

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নে ৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৫টি হাটবাজার আছে। প্রায় তিন হাজার মানুষ বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা পান। কিন্তু সেখানে ব্যাংকের কোনো শাখা নেই। এ কারণে ওই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের ১০ কিলোমিটার দূরে এসে ব্যাংকে লেনদেন করতে হয়। এতে আর্থিক খরচের পাশাপাশি তাঁদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের অবস্থান। লোকসংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার। বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের অন্তত ৭০০ জন দেশ-বিদেশ থেকে নিয়মিত টাকা পাঠান। রয়েছে ৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যার শিক্ষকেরা বেতন ওঠান ব্যাংক থেকেই। ওই ইউনিয়নে ছোট–বড় ৫টি বাজারে রয়েছে এক হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। আছে ইউনিয়ন পরিষদ, চালকল, রড-সিমেন্টের ডিলার, ইটভাটার মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানও। ইউনিয়নের তিন হাজার মানুষ বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা পান। এত কিছুর পরও কোনো ব্যাংকের শাখা না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এখানকার মানুষকে।

দ্যাশোত সরকার কত কিছু করে, খালি হামার ইউনিয়নোত ব্যাংকটা দিবার পারোছে না। ব্যাংক না থাকায় হামাক বহুদূর যেয়া ইকরচালী কৃষি ব্যাংকোত বয়স্ক ভাতার টাকা তুলবার নাগোছে। এতে হামার খুব কষ্ট পাওছি। টাকাও খরচ হওছে।
আনোয়ারা বেগম, বাসিন্দা, উজিয়াল গ্রাম

আজ সোমবার কাশিয়াবাড়ি বাজারে কথা হয় ইউনিয়নের উজিয়াল গ্রামের ভাতাভোগী আনোয়ারা বেগমের (৬৮) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাবা, দ্যাশোত সরকার কত কিছু করে, খালি হামার ইউনিয়নোত ব্যাংকটা দিবার পারোছে না। ব্যাংক না থাকায় হামাক বহুদূর যেয়া ইকরচালী কৃষি ব্যাংকোত বয়স্ক ভাতার টাকা তুলবার নাগোছে। এতে হামার খুব কষ্ট পাওছি। টাকাও খরচ হওছে।’

ইকরচালী কৃষি ব্যাংকে ভাতার টাকা তুলতে এসেছেন হাতিবান্ধা গ্রামের আমজাদ হোসেন (৭০)। তিনিও বলেন, ‘বাবা, মুই তো আগের মতোন হাঁটির পাও না। হামার বুড়া মাইনসের কষ্টও তো কায়ও বোঝছে না। বাড়ি থাকি ১০ কিলোমিটার দূরত আসি টাকা তুলতে যে কী কষ্ট হয়ছে, তাক তোমাক বুঝবার পাইম না। হামার ইউনিয়নোত একটা ব্যাংক থাকলে এমতোন কষ্ট হইল না হয়।’

ইউনিয়নের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এখানে একটি ব্যাংকের শাখা হলে এলাকায় আরও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, সাধারণ মানুষও আর্থিক নিরাপত্তা পাবে।
হারুন-অর-রশিদ, চেয়ারম্যান, হাড়িয়ারকুঠি ইউপি

হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ বলেন, উপজেলার মধ্যে আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়ন। এখানে ব্যাংকের কোনো শাখা না থাকায় শিক্ষক, ব্যবসায়ী, ভাতাভোগীসহ ইউনিয়নের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এখানে একটি ব্যাংকের শাখা হলে এলাকায় আরও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, সাধারণ মানুষও আর্থিক নিরাপত্তা পাবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান বলেন, ইউনিয়নে এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা স্থাপনের জন্য শিগগিরই উপজেলার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলব।