তাড়াশে শয়নকক্ষে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ

গৃহবধূ জাকিয়া আক্তার সকালে বিষণ্ন মুখে বলেছিলেন, ‘কিছু ভালো লাগছে না।’ পরে নিজের কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। সাড়াশব্দ না পেয়ে শাশুড়ি পরে জানালা দিয়ে দেখতে পান, গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ঘরের ধরনায় ঝুলছে জাকিয়ার দেহ। জাকিয়ার শ্বশুরবাড়ির ভাষ্য এটা হলেও বাবা দাবি করেছেন, তাঁর মেয়েকে যৌতুকের কারণে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার গৃহবধূর লাশ উদ্ধারের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুবুল আলম।   

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের কর্ণঘোষ গ্রাম থেকে জাকিয়া আক্তারের (২০) লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি ওই গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে দিনমজুর রাশেদুল ইসলামের (২৩) স্ত্রী।

জাকিয়া একই ইউনিয়নের আড়ংগাইল গ্রামের জফের আলির মেয়ে। জফের আলির প্রথম স্ত্রীর চার ছেলেমেয়ের মধ্যে জাকিয়া ছিলেন তৃতীয়। জাকিয়ার মা মারা যাওয়ার পর জফের আলি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই সংসারে তাঁর একটি মেয়ে রয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, রাশেদুলের সঙ্গে জাকিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বছর দেড়েক আগে তাঁদের বিয়ে হয়। রাশেদুল পেশায় দিনমজুর। এক সপ্তাহ আগে তিনি কাজের প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যান।

জাকিয়ার বাবা জফের আলি প্রথম আলোকে বলেন, মেয়ের শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে তাঁর খুব একটা আত্মীয়তা ছিল না। কাল মেয়ের মৃত্যুর খবর তাঁকে জানান মেয়ের মামাশ্বশুর আবদুল আলিম। মামাশ্বশুর বলেছেন, কোনো কারণে বিষাদ থেকে জাকিয়া সকালে ঘরের ধরনার সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে বাবার দাবি, যৌতুকের দাবিতে তাঁর মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখেন, লাশ ঘরের মেঝেতে রাখা।

দেশীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) মো. আবদুল কুদ্দুস জানান, জাকিয়ার মৃত্যুর ঘটনাটি তিনি শুনেছেন।

৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কাল হঠাৎ করেই মেয়েটির মৃত্যুর খবর পাই। পারিবারিক অশান্তির কোনো তথ্য তাঁর জানা নেই।’

গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, জাকিয়ার মৃত্যু নিয়ে তাঁর বাবার সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির দিনভর দরবার হলেও তা সুরাহা না হওয়ায় পুলিশকে জানানো হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সন্ধ্যায় লাশ উদ্ধার করে।

আজ বুধবার দুপুরে তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুবুল আলম বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। গৃহবধূর বাবা বাদী হয়ে থানায় যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ জানিয়ে গৃহবধূর স্বামী ও শ্বশুর–শাশুড়িকে আসামি করে মামলা করেছেন। গৃহবধূর লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ওসি।