তিতাসের ৪ কর্মকর্তাসহ ৮ জনের জামিন

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিতাস গ্যাসের চার কর্মকর্তাসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
প্রথম আলো ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লায় মসজিদে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ৪ কর্মকর্তাসহ ৮ জনের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। গ্রেপ্তার ৮ জনের দুদিনের রিমান্ড শেষে সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফতাবুজ্জামানের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন।

এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং হতাহতের পরিবারগুলোকে সহায়তাসহ ছয় দফা দাবিতে সোমবার প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা।

জামিন পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন তিতাস গ্যাস ফতুল্লা আঞ্চলিক অফিসের বরখাস্তকৃত ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম (৪২), উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান (৩৪), সহকারী প্রকৌশলী মানিক মিয়া (৩৩), সহকারী প্রকৌশলী এস এম হাসান শাহরিয়ার (৩২), সিনিয়র সুপারভাইজার মনিবুর রহমান চৌধুরী (৫৬), সিনিয়র উন্নয়নকারী মো. আইউব আলী (৫৮), সাহায্যকারী হানিফ মিয়া (৪৮) ও কর্মচারী ইসমাইল প্রধান (৪৯)।

আসামিপক্ষের আইনজীবী সুলতান আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, মসজিদের ভেতরে তিতাসের কোনো লাইন ছিল না। তিতাস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বৈধ কোনো সংযোগ নেননি কেউ। এখানে ৩০৪–এর (ক) ধারা অনুযায়ী আসামিদের বিরুদ্ধে অবহেলার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেই আইনে তাঁরা পড়েন না। আদালত শুনানি শেষে আসামিদের পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তিতাসের ৪ কর্মকর্তাসহ ৮ জনকে ৫০০ টাকা বন্ডে পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গত শনিবার রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিতাস গ্যাসের সাময়িক বরখাস্ত করা ৪ কর্মকর্তাসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ওই দিন মসজিদে বিদ্যুৎ–সংযোগ প্রদানকারী মিস্ত্রি মোবারক হোসেনকে পশ্চিম তল্লা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
৪ সেপ্টেম্বর রাতে শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুল সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে এক শিশু, মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হান্নান সাউদসহ ৩৩ জনের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আরও তিনজন চিকিৎসাধীন।

নিহতের স্বজনদের ৬ দফা দাবি

মসজিদে বিস্ফোরণে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের ৬ দফা দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। সোমবার বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিনের কাছে স্মারকলিপি তুলে দেন স্বজনহারা পরিবারের পক্ষে নিহত ইমাম আবদুল মালেকের ছেলে নাইমুল ইসলাম। এ সময় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপির দাবিগুলো হলো—

  • ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা।

  • ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান।

  • স্বামীহারাদের সরকারের বিধবা ভাতার আওতায় আনা।

  • দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদের পূর্ণ সংস্কার করে দ্রুত নামাজের ব্যবস্থা।

  • মসজিদ–সংলগ্ন রাস্তা দুটি মেরামত করা।

  • সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।