তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর ভর্তির সুযোগ পেলেন দিপেন টুডু

শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির জন্য এসে জরুরি বিভাগের সামনে তিন ঘণ্টা শুয়ে ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ক্ষুদ্র জাতিসত্তার গ্রাম ফিল্টিপাড়ার দীপেন টুডু। শুক্রবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে।
ছবি: প্রথম আলো

আট দিন ধরে দিপেন টুডু শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। শুক্রবার সকালে তাঁর স্বজনেরা তাঁকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করার জন্য নিয়ে আসেন। কিন্তু তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ভর্তির সুযোগ পাচ্ছিলেন না। অবশেষে বিএমএর এক নেতার সুপারিশে তিনি ওই ওয়ার্ডে ভর্তির সুযোগ পান।

কয়েক দিন ধরে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা দিপেন টুডুর মতো অনেক রোগীকেই সদর হাসপাতালে ভর্তি হতে বেগ পেতে হচ্ছে। অনেকে অবশ্য ভর্তি হওয়ার সুযোগও পাচ্ছেন না।

করোনা ওয়ার্ডে কর্মরত চিকিৎসা কর্মকর্তা আহনাব শাহরিয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ওয়ার্ডে ৭২টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু এখন ভর্তি আছেন ৭৪ জন। এখানে একসঙ্গে ৭২ জনকে অক্সিজেন দেওয়া যায়। এ জন্য এর বাইরে তাৎক্ষণিক অক্সিজেন দেওয়া দরকার, এমন রোগীকে ভর্তি নেওয়া সম্ভব হয় না।

সিভিল সার্জন জাহিদ নজরুল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ১০ দিন ধরে শয্যাসংখ্যার বেশি রোগী নিয়ে করোনা ওয়ার্ড চলছে। করোনায় আক্রান্ত রোগী, যাঁদের অক্সিজেন তেমন লাগছে না, তাঁদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

শুক্রবার বেলা পৌনে দুইটার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউপির ক্ষুদ্র জাতিসত্তার কোলদের গ্রাম ফিল্টিপাড়া থেকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা রোগী দিপেন টুডু (৪০) সেখানে শুয়ে আছেন। তাঁর পাশে বোন মাংলী টুডু ও বাবা বিজলু টুডু।

ছেলে দিপেন টুডুর বিষয়ে জানতে চাইলে বিজলু টুডু বলেন, আট দিন ধরে দিপেন টুডু শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। সকালে তাঁরা তাঁকে পদ্মা ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আবু শাহিনকে দেখানো হয়। তিনি দিপেন টুডুকে করোনা সন্দেহভাজন চিহ্নিত করে সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হতে বলেন। কিন্তু সেখানে ভর্তির সুযোগ না পাওয়ায় হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তির জন্য তিন ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করতে থাকেন তাঁরা। কিন্তু ছেলেকে ভর্তি করার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। অবশেষে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) এক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। ওই নেতা মুঠোফোনে জরুরি বিভাগের চিকিৎসককে বলার পর দিপেন টুডু বেলা সোয়া দুইটার দিকে ভর্তির সুযোগ পান।

একই সঙ্গে বিএমএর ওই নেতার সুপারিশে গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের নগরপাড়া গ্রাম থেকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা কামরুল হাসান (৩৪) হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পান।

এ বিষয়ে কামরুল হাসানের শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম ও মামা মো. আসাদুল্লাহ বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন কামরুল হাসান। সকালে গিয়েছিলেন গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসা কর্মকর্তা কামরুল হাসানকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী এখান এসে করোনা ওয়ার্ডে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু সেখানে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তির জন্য এসেছেন।

দিপেন টুডুকে তিন ঘণ্টা ধরে ভর্তি না নেওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই সময় জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মো. সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে এখন অক্সিজেন–সংকট চলছে। এ জন্য করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের ভর্তি না নেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এ জন্য এতক্ষণ দিপেন টুডুসহ আরও একজন রোগীকে ভর্তি নেওয়া সম্ভব হয়নি।