তিন ঘণ্টায় অর্ধকোটি টাকার মাছের বিকিকিনি

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার গাজীপুর আড়তে চলছে মাছের বেচাকেনা। সম্প্রতি তোলা।
প্রথম আলো

ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক ব্যস্ত হয়ে ওঠার আগেই দূরদূরান্ত থেকে আসতে থাকেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। বেলা যত বাড়তে থাকে ততই জমজমাট হয়ে ওঠে আড়ত। এরপর সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ক্রেতা–বিক্রেতা আর আড়তদারদের শোরগোলে পুরো এলাকা চঞ্চল হয়ে ওঠে। বেলা একটার দিকে ভিড় কমে যায়। এই তিন ঘণ্টাতেই মাছের যে কেনাবেচা হয়, টাকার অঙ্কে তা ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা।

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার গাজীপুর বাজারের মাছের আড়তের প্রতিদিনের চিত্র এটি। ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পাশে প্রায় ১০ বছর আগে মাত্র একটি দোকানের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল এ ব্যবসা। দিনে দিনে এ বাজারে আড়তদার বাড়তে থাকে। বর্তমানে ৩০টি আড়ত হয়েছে। নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের হাওরের মাছ থেকে শুরু করে, আটপাড়া, মদন, ময়মনসিংহের ফুলপুর, তারাকান্দাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে মাছচাষিরা নিজেদের মাছ নিয়ে আসেন। ওই সব মাছ ব্যবসায়ীরা কিনে প্রতিদিন পাঠান ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

সম্প্রতি সরেজমিনে কথা হয় মাছের ক্রেতা, বিক্রেতা ও আড়তদারদের সঙ্গে। আড়তদারেরা জানান, ১০ বছর আগে মাত্র একটি দোকানের মাধ্যমে গাজীপুর বাজারে আড়তদারি ব্যবসা শুরু হয়। শুরুতে এমনও হয়েছে, সারা দিনে এক টাকার মাছও বিক্রি হয়নি। মাছ ব্যবসায়ী ও মাছচাষিদের ফোন করে খবর দিয়েও আনা যেত না। তবে দিনে দিনে গাজীপুর বাজারে মাছের আড়ত জমতে শুরু করে। শেষ চার বছরে এ বাজার জমে উঠেছে সবচেয়ে বেশি।

বাজার জমে ওঠার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত মাছের আড়ত ক্রেতাদের মোট বিক্রির শতকরা ৫ টাকা আড়তদারদের দিতে হয়। এ ছাড়া বিক্রেতাদের কাছ থেকে শতকরা ২ টাকা থেকে ৩ টাকা আদায় করা হয়। তবে গাজীপুর বাজারে ক্রেতাদের কাছ থেকে শতকরা ৩ টাকা আর বিক্রেতাদের কাছ থেকে ২ টাকা আদায় করা হয়। এর বাইরে অন্য প্রকার চাঁদা দিতে হয় না।

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার গাজীপুর আড়তে সকাল থেকে চলে মাছের বেচাকেনা। সম্প্রতি তোলা।
প্রথম আলো

কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আড়তটি জমে ওঠায় স্থানীয় ব্যক্তিদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। শুরুতে সব আড়তদার ও ক্রেতা ছিলেন গৌরীপুর উপজেলার বাইরের বাসিন্দারা। দিনে দিনে এই উপজেলার ক্রেতা ও আড়তদার বেড়েছে। এতে স্থানীয় ব্যক্তিদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। তবে আড়তদার, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে দিনে দিনে ক্রেতা–বিক্রেতা ও আড়তদার বাড়লেও কোনো স্থান বাড়েনি। এতে বর্ষাকালে আড়তে কাদা হয়। এ ছাড়া পাশে মহাসড়ক থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।

নুরুল ইসলাম নামের একজন বলেন, তাঁর বাড়ি গাজীপুর বাজারের কাছে। চার বছর আগে তিনি গাজীপুর বাজারে আড়ত দিয়েছেন। বর্তমানে তাঁর ব্যবসা ভালো। দ্বীন ইসলাম নামের অপর একজন আড়তদার বলেন, তিনিও গাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা। দেড় বছর আগে বাজারে মাছের আড়ত খুলেছেন। ব্যবসা ভালো। তবে অনেক বাকি পড়ে যায়।
হাবিবুল ইসলাম নামের একজন ক্রেতা বলেন, তিন বছর ধরে তিনি গাজীপুর আড়ত থেকে মাছ কিনে ঢাকায় পাঠান। এ বাজারে অন্যান্য বাজারের তুলনায় খরচ কম হয়। তাতে ব্যবসা ভালো হয়।

গাজীপুর বাজার মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আলী হোসেন বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে হওয়ায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনজন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যতক্ষণ আড়ত চলে ততক্ষণই তিনজন যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করেন। এ ছাড়া অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা বৃদ্ধির চিন্তা তাঁদের রয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শেষ হলে আমরা কাজ শুরু করব।’