তিন চাকার বাহনে মানুষের চলাচল, উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

কঠোর বিধিনিষেধের পরও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবাধে চলছে তিন চাকার বাহন। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে চলাচল করছেন মানুষ। সোমবার দুপুরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার দেওহাটা বাসস্ট্যান্ডে
প্রথম আলো

সড়কে রোদের তাপ যেন অসহনীয়। এরই মধ্যে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভ্যানে চেপে কর্মস্থলে যাচ্ছেন ঢাকার সাভার উপজেলার বাইপাইল এলাকায় একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক সুফিয়া বেগম। কোলে তাঁর আড়াই বছরের শিশু। থেকে থেকে কেঁদে উঠছে শিশুটি।

সুফিয়া বলেন, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার আনাহোলা ইউনিয়নে তাঁদের বাড়ি। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তাঁরা বাড়ি থেকে ভ্যানে চেপে বাইপাইলের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। পথে শিশুটি কিছু খায়নি। সঙ্গে যোগ হয়েছে রোদের তাপ। এ গরম শিশুটির কাছে অসহনীয়। এ জন্য সে বেশি কাঁদছে।

কঠোর বিধিনিষেধের চতুর্থ দিন আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মির্জাপুর উপজেলার দেওহাটা এলাকায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

ভ্যানচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ভ্যানে থাকা পাঁচজন তাঁর আত্মীয়। সঙ্গে এক বস্তা চাল ও জামা-কাপড় রয়েছে। তিনি বাইপাইলে একটি দোকানের মালামাল পরিবহনের কাজ করেন। ঈদের আগের দিন মঙ্গলবার পরিবারের সবাই বাড়ি গিয়েছিলেন। বিধিনিষেধের কারণে দোকান ও পোশাক কারখানা বন্ধ থাকার কথা থাকলেও তাঁদের জানানো হয়েছে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে কাজে যোগ দিতে হবে। এ জন্য বাধ্য হয়ে তাঁরা সবাই ভ্যানে ফিরছেন।

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অহন রিকশা-ভ্যান ছাড়া চলার উপায় নাই। বাড়ি থিক্যা বাইপাইল যাইতে পরাই (প্রায়) সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগব। গাড়িতেও পরাই একই সময় লাগে।’

মহাসড়কের ধেরুয়া, কুর্নী, ইচাইল, পোস্টকামুরীসহ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কে প্রচুর পরিমাণে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক এবং মোটরসাইকেল চলাচল করছে। এতে গাদাগাদি করে লোকজন চলাচল করায় উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। উপজেলা সদরের সঙ্গে সংযোগ থাকা এসব যানবাহন সড়কে বেশি চলছে।

দেওহাটা বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ পাশে থাকা ইজিবাইকচালক মীর দেওহাটা গ্রামের নুর মোহাম্মদ বলেন, দেওহাটা থেকে গেড়ামারা-বহুরিয়া-চান্দুলিয়া হয়ে ধানতারা পর্যন্ত মানুষ প্রতিদিন চলাচল করছে। তাঁরা মির্জাপুরসহ আশপাশের এলাকায় যাতায়াত করছেন। ভাড়া আগের মতো ৫০ টাকাই রয়েছে।

নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘কি করুমু। নিজেগো চলন লাগে। কিস্তি কইর‌্যা গাড়ি কিনছি। কিস্তি বন্ধ না। আজ সোমবারও বাসা এনজিও থিক্যা ২৫০০ টাকা কিস্তি নিয়া গ্যাছে।’

যাত্রী বহুরিয়া গ্রামের সখি চরণ পাল বলেন, সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মেয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। যাওয়া-আসার সময় তিনি ভেঙে ভেঙে (যান পরিবর্তন) রিকশায় আর পায়ে হেঁটে চলেছেন।

উপজেলা সদরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড ও বাইপাস বাসস্ট্যান্ড এলাকায়ও অটোরিকশা, ইজিবাইক ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল দেখা গেছে। মানুষ মির্জাপুর বাজারে আসা-যাওয়া করছেন। এতে উপজেলা সদরে প্রচুর লোকসমাগম হচ্ছে।

মির্জাপুরের বংশাই রোড থেকে পাথরঘাটা বাজার, কুর্নী-ফতেপুর সড়ক, কদিমধল্যা-ছাওয়ালী, পাকুল্যা-লাউহাটী, পাকুল্যা-ভাবখণ্ড-আনাইতারা-চামারীফতেপুর, মির্জাপুর-ভাওড়া-কামারপাড়া, মির্জাপুর-ভাতগ্রাম, মির্জাপুর-উয়ার্শী-বালিয়া, ধেরুয়া-রানাশাল, গোড়াই-সখিপুর সড়কে যানগুলো বেশি চলছে।

উপজেলা সদরের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত যান এবং মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন বন্ধ করা না গেলে কঠোর বিধিনিষেধ সফল হবে না।

মির্জাপুরের গোড়াই হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজিজুল হক জানান, নির্ধারিত কিছু কারণ ছাড়া মহাসড়কে ওই সব যান চললে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে।

টাঙ্গাইলের সহকারী পুলিশ সুপার (মির্জাপুর সার্কেল) দীপঙ্কর কুমার ঘোষ বলেন, কঠোর বিধিনিষেধে সরকারি নিয়মানুযায়ী কিছু যান সড়ক-মহাসড়কে চলছে। নিয়মের বাইরে কেউ যান চালালে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।