তিন চাকার যানে এত টান

উচ্চ আদালত বৈধতা দেওয়ায় সুদিনের আশায় তিন চাকার যান চালকেরা। তাঁদের পক্ষে টানা নিয়ে সরগরম নগরের রাজনীতি।

বরিশাল নগরে গণপরিবহন হিসেবে চলাচল করে তিন চাকার যান ইজিবাইক। গতকাল রাতে নগরের সাগরদী এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

বৈধতা না থাকায় বরিশাল নগরে একরকম উপেক্ষিত ও নিগৃহীত ছিলেন তিন চাকার যানবাহনের চালকেরা। তাঁদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই মাঠে ছিলেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতা মনীষা চক্রবর্তী। সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে তিন চাকার যানের বৈধতা পাওয়ার পর সুদিনের আশায় চালকেরা। ঠিক এ সময় বরিশালের রাজনীতিতে তাঁদের কদর বেড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এই চালকদের পক্ষে টানার জন্য বেশ তৎপর হয়ে উঠেছেন। আর সমর্থন ধরে রাখতে মনীষা চক্রবর্তীও সক্রিয়। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে বরিশাল নগরকেন্দ্রিক রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন যানচালক বলেন, সম্প্রতি পক্ষে-বিপক্ষে টানার যে প্রবণতা শুরু হয়েছে, তাতে কয়েক হাজার চালক-শ্রমিক চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন।

বরিশাল নগরে গণপরিবহন বলতে তিন চাকার ব্যাটারিচালিত রিকশা, হলুদ অটোরিকশা, সিএনজি ও ডিজেলচালিত অটোরিকশাই ভরসা। নগরের কলেবর, আয়তন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এসব বাহন বেড়েছে কয়েক গুণ। এখন সব মিলিয়ে অন্তত ১০ হাজার বাহন নগরের আনাচকানাচে যাত্রী পরিবহন করছে।

নগরের রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করেন, এমন অন্তত তিনজন সচেতন নাগরিক প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দিকে বড় দলগুলো এসব যানের চালকদের তেমন পাত্তা দেয়নি। কারণ, তাঁরা সংখ্যায় কম ছিলেন ও এসব যানের বৈধতা ছিল না। সম্প্রতি এসব যান বৈধতা পেয়েছে, সংখ্যাও বেড়েছে। এসব যানের চালকেরা পরিবার নিয়ে নগর এলাকায় বসবাস করায় বেশির ভাগই এখানকার ভোটার হয়েছেন। ফলে এই অংশের শ্রমজীবী মানুষেরা ক্রমেই মনীষার দলের ছোট মিছিলের পরিধিকে বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই ভোটব্যাংক এখন বড় দলগুলোর জন্য ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে তাঁদের কদর বেড়েছে।

২০১৮ সালে বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে সাদিক আবদুল্লাহর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মনীষা চক্রবর্তী।

ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যানের নীতিমালা প্রণয়ন, বিআরটিএ কর্তৃক লাইসেন্স প্রদান ও চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে গত সোমবার সকালে নগরের সদর রোডে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাসদ ও ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ। একই দিন বিকেলে নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে তিন চাকার চালকদের পৃথক সমাবেশ ডাক দেন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর সমর্থক ইজিবাইক ব্যাটারিচালিত রিকশা কল্যাণ সংগঠন।

বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ব্যাটারিচালিত রিকশা ছাড়া বরিশাল নগরে একসময় ২ হাজার ৬১০টি ব্যাটারিচালিত তিন চাকার বাহনকে লাইসেন্স দিয়েছিল সিটি করপোরেশন। সাদিক আবদুল্লাহ ২০১৮ সালে মেয়র হওয়ার পর দুই বছর তা চালু ছিল। এরপর তিন চাকার যানের পক্ষে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন বাসদ নেতা মনীষা। এর মধ্যে গত ৪ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এক আদেশে মহাসড়ক ছাড়া অন্যান্য সড়কে এসব যান চলাচল করতে পারবে বলে আদেশ দিয়েছেন।

সোমবার সমাবেশে মনীষা বলেন, এসব যানের বৈধতা দিতে এবং চাঁদাবাজি, অত্যাচার প্রতিরোধে তাঁরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছেন। তাঁকেসহ অনেক শ্রমিককে বেধড়ক পেটানো হয়েছে। গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। এরপরও তাঁরা রাজপথ থেকে সরে যাননি। এখন এসব শ্রমিকের সমর্থন পেতে ক্ষমতাসীন দলের একটি চক্র নানাভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সিটি করপেরারেশন থেকে তাঁদের লাইসেন্স দেওয়ার নামে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। কিন্তু এসব যানবাহনের লাইসেন্স দেবে বিআরটিএ। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান নয়।

একই দিন বিকেলের সমাবেশে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ এসবের পাল্টা জবাব দেন। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে নিবন্ধিত হয়ে নগরীতে অটো চলাচল করলেও কয়েক স্থানে তাদের টাকা দিতে হয়। তিনি সার্বিক বিবেচনায় সিটি করপোরেশনের এক কোটি টাকা ক্ষতি করে ২ হাজার ১০০ অটোর নিবন্ধন করে দিয়েছিলেন। কিন্তু অটো চলাচল বন্ধ করেননি।

মেয়র শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা কাউকে টাকা দেবেন না। তারা আপনাদের এই নগরীতে চলাচলের অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। এ নগরীতে চলাচলের বিষয়ে একমাত্র সিটি করপোরেশনই অনুমতি দিতে পারবে এবং আপনারা যাতে নগরীতে চলাচল করতে পারেন, সে ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’