তিন দিন পরে সীমিত আকারে চলাচল করছে ফেরি, সংকট কাটেনি

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ঘাট। নাব্যতাসংকটে এখান থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌরুটে গত তিন দিন বন্ধ ছিল ফেরি চলাচলফাইল ছবি

তিন দিন বন্ধ থাকার পর মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে স্বল্পসংখ্যক যানবাহন নিয়ে চলাচল করছে মাত্র চারটি ফেরি। নাব্যতাসংকটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় এই নৌপথে আসা যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকদের দুর্ভোগ কাটছে না।

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া ঘাট সূত্র জানায়, আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে এ নৌপথে ফেরি চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। স্রোত ও নাব্যতাসংকটে প্রায় দুই মাস ধরে রাতে বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল। গত সোমবার সকালে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর চায়না নৌ চ্যানেলের তিনটি ফেরি ডুবোচরে আটকে যায়। নৌপথে সব ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ওই দিন বেলা সাড়ে তিনটার পর থেকেই ফেরি চলাচল স্থগিত রাখে ঘাট কর্তৃপক্ষ।

গত সোমবার দুপুর সাড়ে ৩টার পর থেকে সব ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছিল পদ্মা সেতুর ২৬ নম্বর পিলারের আগে ও পরে। আজ বৃহস্পতিবার ফেরি চালু হলেও তা সংখ্যায় খুবই সীমিত। ফেরিগুলো সক্ষমতার অর্ধেক যান তুলেছে আজ।

এদিকে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় উভয় ঘাটেই আটকা পড়েছে কয়েক শ যানবাহন। যাত্রীরা কোনোমতে লঞ্চ ও স্পিডবোটে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হলেও যানবাহনগুলোকে পারাপারের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ফলে যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকদের দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।

ঘাটে এসেছি সাত দিন পার হয়ে গেল। এখানেই নাওয়া, খাওয়া, ঘুম। তিন দিন তো একটাও ফেরি চলে নাই। আজ (বৃহস্পতিবার) দুই–তিনটা ফেরি চললেও তাতে আমাদের জায়গা হয়নি। এভাবে ঘাটে পড়ে থেকে আমাদের দুর্ভোগের শেষ থাকছে না।
কামরুল হাসান, কাঁঠালবাড়ি ঘাটে আটকা পড়া সিলেটগামী পণ্যবাহী ট্রাকের চালক

কাঁঠালবাড়ি ঘাটে ঢাকাগামী যাত্রী মিল্টন নাগ বলেন, ‘ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ফেরিঘাটে বেলা দুইটায় আসি। এসে ফেরির জন্য দুই ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকেও প্রাইভেট কারটি ফেরিতে তুলতে পারিনি। অবশেষে উপায় না দেখে টার্মিনালে গাড়ি রেখে লঞ্চে পদ্মা পাড়ি দিতে হলো।’

ঘাটের টার্মিনালে এক সপ্তাহ ধরে আটকা পড়েছে বেশ কিছু পণ্যবাহী ট্রাক। সিলেটগামী পণ্যবাহী ট্রাকের চালক কামরুল হাসান বলেন, ‘ঘাটে এসেছি সাত দিন পার হয়ে গেল। এখানেই নাওয়া, খাওয়া, ঘুম। তিন দিন তো একটাও ফেরি চলে নাই। আজ (বৃহস্পতিবার) দুই–তিনটা ফেরি চললেও তাতে আমাদের জায়গা হয়নি। এভাবে ঘাটে পড়ে থেকে আমাদের দুর্ভোগের শেষ থাকছে না।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুল আলিম প্রথম আলোকে বলেন, আজ বৃহস্পতিবার উভয় ঘাট থেকে চারটি ফেরি ছাড়া হলেও নৌ চ্যানেলে সমস্যা এখনো কাটেনি। দুপুরে তিন-চারটি ফেরি চায়না নৌ চ্যানেল দিয়ে পারাপার হলেও বিকেলে কিশোরী নামের একটি মাঝারি আকারের কে-টাইপ ফেরি ডুবোচরে আটকে যায়। সন্ধ্যার পর থেকে আবার ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হবে। এরপর সারা রাত নৌ চ্যানেলে ড্রেজিং করা হবে। আগামীকাল শুক্রবার সকাল থেকে আশা করা যায় ফেরি চলাচলের সংখ্যা বাড়বে।

কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ফেরি চালু হলেও তা সংখ্যায় খুবই সীমিত। ফেরিগুলো হাফ লোড (সক্ষমতার অর্ধেক যান তুলছে) নেয়। তাই যানবাহন পারাপারে কিছুটা দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পণ্যবাহী ট্রাকের চালকদের। উভয় ঘাটে যেসব পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে, সেগুলো এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পদ্মা পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে।