তিন দিনেও প্রধান আসামি রাজুকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ

কুমিল্লার বুড়িচংয়ে গুলিতে নিহত সাংবাদিক মহিউদ্দিন ওরফে নাঈম সরকার
ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় গত বুধবার গুলিতে নিহত সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার (২৮) হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে পলাশ ও মনির সাংবাদিক মহিউদ্দিন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। অপর দুজনের নাম তদন্তের স্বার্থে এখন বলতে চাচ্ছে না পুলিশ। আজ শুক্রবার দুপুরে বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে হত্যা মামলার প্রধান আসামি রাজুকে ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

সাংবাদিক মহিউদ্দিন হত্যার বিচার দাবিতে আজ কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের কয়েকটি সংগঠন মানববন্ধন করেছে।

এর আগে গতকাল বিকেলে মহিউদ্দিনের মা নাজমা আক্তার বাদী হয়ে বুড়িচং থানায় কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের রাজুকে প্রধান আসামি করে মোট তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৬ থেকে ৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের দিন মহিউদ্দিনকে মাদকের চালান ঢুকবে বলে মুঠোফোনে খবর দেন মাদক ব্যবসায়ী সুজন খান। তাঁকেসহ সন্দেহভাজন আরেক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

মহিউদ্দিন সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মাহফুজ বাবু বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে মহিউদ্দিন সরকারকে ভারতীয় সীমান্তবর্তী কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের শংকুচাইলসংলগ্ন হায়দারাবাদ নগর এলাকায় ডেকে নিয়ে যান সুজন খান। খবর পেয়ে রাতে সেখানে মাদক কারবারিদের সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হয়।

একপর্যায়ে মাদক কারবারি মো. রাজুর নেতৃত্বে কয়েকজন মহিউদ্দিনকে গুলি করেন। তাঁদের আরও কয়েকজন সঙ্গী তাঁকে লোহার রড দিয়ে মারধর করে পালিয়ে যান। পরে বিজিবির সদস্যদের সহযোগিতায় তাঁকে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে আনার আগেই মহিউদ্দিন মারা যান। গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের অলুয়া গ্রামে জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

নিহত মহিউদ্দিন অলুয়া গ্রামের পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত সহ–উপপরিদর্শক (এএসআই) মোশারফ সরকার ও নাজমা আক্তারের ছেলে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে মহিউদ্দিন সবার বড়। তাঁর ছোট ভাই বিদেশ থাকেন। একমাত্র বোনের বিয়ে হয়ে গেছে।
মহিউদ্দিন কুমিল্লার ডাক পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন। তিনি এর আগে আনন্দ টিভির ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্রতিনিধি পদে কাজ করতেন। এ ছাড়া তিনি একটি অনলাইন পত্রিকাও চালাতেন।

মহিউদ্দিনের মা নাজমা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলে প্রতিবাদী ছিল। মাদকের বিরুদ্ধে সব সময় সাহসী কাজ করত। এখন হত্যা মামলার প্রধান আসামি রাজু গ্রেপ্তার হয়নি। আমি আসামিদের ফাঁসি চাই।’

বুড়িচং থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘মহিউদ্দিন হত্যা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন এজাহারভুক্ত। এখনই অন্য দুজনের নাম বলতে চাই না। তদন্ত চলছে। বিস্তারিত সংবাদ সম্মেলন করে জেলা পুলিশ জানাবে। আমরা প্রধান আসামি রাজুকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছি।’

মহিউদ্দিন হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন
আজ বেলা ২টা ৩১ মিনিটে কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে কুমিল্লা ফটো সাংবাদিক ফোরাম, কুমিল্লা রিপোটার্স ইউনিটি ও বুড়িচং উপজেলা প্রেসক্লাবের সদস্যরা মহিউদ্দিন সরকার হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করবে।