তিন বছর ১০ মাস আগে মারা যাওয়া নারীর নামে ভিজিডির চাল উত্তোলন

রংপুর জেলার মানচিত্র

সন্তান প্রসবের সময় ২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় গৃহবধূ সুলতানা বেগমের (২৮)। এর ৩ বছর ১০ মাস পর তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ভিজিডির তালিকায়। ইতিমধ্যে তাঁর নামে বরাদ্দ ৯০ কেজি চালও উত্তোলন করা হয়েছে।

মৃত ওই গৃহবধূর বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কিসমত বসন্তপুর গ্রামে। বিষয়টি জানতে পেরে ওই গৃহবধূর স্বামী মাহাবুল ইসলাম গত বুধবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ দেওয়ার পর ইউএনওর কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় ক্ষুব্ধ মাহাবুল ইসলাম বলেন, ‘চাইর (চার) বছর হইচে মোর বউ মরার। তার নামে কার্ড করিয়া চাউল (চাল) তোলা হওচে। তোরায় কন, মোর মরা বউ কি গোর (কবর) থাকি উঠি আসি চাউল তোলোচে! জায় মোর মরা বউয়ের নামে কার্ড করিয়া চাউল তুলি খাওচে, তার মুই কঠিন বিচার চাও। সেই জন্যে স্যারোক (ইউএনও) অভিযোগ দেনো। দেকি কী হয়।’

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে উপজেলায় স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়া, অসচ্ছল ও গরিব-দুস্থ ৩ হাজার ১৫৫ জন নারীর নাম ভিজিডির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রত্যেক কার্ডধারী গত জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত (দুই বছর) প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবেন।

ওয়ার্ড থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত পৃথক তিনটি কমিটি আবেদন যাচাই-বাছাই করার পর নাম ভিজিডির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ সময় তালিকাভুক্ত হয় মৃত সুলতানা বেগমের নামও। তাঁর কার্ড নম্বর ৩৫।

অভিযোগের সূত্র ধরে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইতিমধ্যে গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের ৯০ কেজি চাল মৃত সুলতানার নামে তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে কে তুলেছেন, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি সংশ্লিষ্ট গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজার রহমান। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে এসব বলা যাবে না। কাগজপত্র ঘেঁটে দেখতে হবে।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম বলেন, ওয়ার্ড থেকে উপজেলা পর্যন্ত ১৩ সদস্য করে তিন স্তরের পৃথক তিনটি কমিটি দুস্থ ও অসহায় নারীদের নাম যাচাই-বাছাই করে ভিজিডির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এরপরও কীভাবে মৃত নারীর নামে ভিজিডি কার্ড হয়েছে, সেটা আশ্চর্যের বিষয়। ঘটনাটি তদন্ত করে অবশ্যই কার্ডটি বাতিল করা হবে।

ইউএনও মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তা তদন্ত করে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’