তিন মাসে মারা গেছে ১৯ শিশু

■ তিন জেলার মধ্যে শিশুদের নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেশি খাগড়াছড়িতে। সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি দেশের ২৩ বিশিষ্ট নাগরিকের।

■ গত নভেম্বর থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলায় ২ হাজার ১৭ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।

■ খাগড়াছড়িতে ১৮ ও রাঙামাটিতে ১ শিশুর মৃত্যু। বান্দরবানে শিশুরা আক্রান্ত হলেও মৃত্যু নেই।

তিন পার্বত্য জেলা—বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। গত তিন মাসে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী ১৯ শিশু। এর মধ্যে খাগড়াছড়িতে মারা গেছে ১৮ জন। বাকি একজন মারা যায় রাঙামাটিতে। বান্দরবানে শিশুরা আক্রান্ত হলেও কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

পাহাড়ে নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ২৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক। গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তাঁরা এ ঘটনায় সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, নিউমোনিয়ায় এত শিশুর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়।

তিন জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানবিদের কাছ থেকে পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বরের শুরু থেকে চলতি ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত (তিন মাসে) তিন পার্বত্য জেলায় ২ হাজার ১৭ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ শিশু। খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের তিন মাসের আক্রান্তের হিসাব পাওয়া গেলেও রাঙামাটির দুই মাসের হিসাব পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, পাহাড়ে প্রতিবছর শীতকালে নিউমোনিয়া রোগী, বিশেষ করে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। এবারের প্রাদুর্ভাব অন্য বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি। আবার তিন জেলার মধ্যে খাগড়াছড়িতে আক্রান্তের হার বেশি।

খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রিপল বাপ্পি চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, এ জেলায় ১ নভেম্বর থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩ মাসে ৭৭৯ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে হাসপাতালে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে—নভেম্বরে ৫ জন, ডিসেম্বরে ৬ জন ও জানুয়ারিতে ৭ জন।

এ ছাড়া রাঙামাটিতে ১ ডিসেম্বর থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৭৬ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে তিন মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে বান্দরবানে নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৬৬২ জন আক্রান্ত হয়।

বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বর্তমানে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ২০, রাঙামাটিতে ১৬ ও বান্দরবানে ৬টি শিশু চিকিৎসাধীন।

খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন নূপুর কান্তি দাশ বলেন, খাগড়াছড়িতে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের হার বেশি। তা ছাড়া যোগাযোগসুবিধার কারণে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার রোগীরাও খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থাকে।

সিভিল সার্জন আরও বলেন, শূন্য থেকে এক বছর বয়সের শিশুদের যথাযথ যত্ন নেওয়া না হলে সংকটে পড়ে। এ বয়সের শিশুদের মৃত্যুর সংখ্যাই বেশি।

২৩ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি

তিন পার্বত্য জেলায় নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যুর ঘটনায় সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছেন ২৩ বিশিষ্ট নাগরিক। বাকি দুটি দাবি হলো চিকিৎসাব্যবস্থার অপ্রতুলতা ও সেবাদানকারীদের অবহেলার কারণ রয়েছে কি না, তদন্ত করা এবং শিশুমৃত্যুর পেছনে কী কী সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব আছে, তা খুঁজে বের করা।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদের সই করা বিবৃতিতে তাঁরা আরও বলেন, এতগুলো শিশুর মৃত্যুর পরও রাষ্ট্র নিরুত্তাপ থাকা বৈষম্যমূলক আচরণের শামিল। পাহাড়ে উন্নয়নের নামে অনেক প্রকল্প হয়েছে কিন্তু এসব প্রকল্প শুধু কিছু মানুষের অবসরযাপনকেন্দ্র। যাতে আর কোনো শিশুর মৃত্যু না হয়, অবিলম্বে সেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিদাতা বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে রয়েছেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সরওয়ার আলী, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, উন্নয়নকর্মী রোকেয়া কবির, মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম প্রমুখ।