‘তিরান পাইছি নিশ্চিন্তি কয়দিন খাতি পারবানে’

জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যাওয়া সড়কে পাতানো সাঁকো দিয়ে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে বাড়ি ফিরছেন দুর্ভোগে ভোগা মানুষেরা। কয়রা উপজেলার কালনা এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট নিয়ে মাদ্রাসা ভবনের নিচের তলার এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে বসেছিলেন সালেহা বেগম (৭৫)। অসুস্থ হয়ে স্বামী বসে আছেন বাড়িতে। নিজের শরীরও আর চলে না। তারপরও প্রতিদিন কাজ করে ঘরের জন্য খাবার জোগাড় করতে হয়। কিন্তু জলোচ্ছ্বাসে এলাকার বাঁধ ভেঙে এখন তাঁর ঘরে হাঁটুপানি আর খাবারের কষ্ট।

ত্রাণ নিয়ে কী করবেন, বলতেই শুকনা মুখে হাসি ফোটে সালেহা বেগমের। ফোকলা দাঁতে একঝলক হাসি দিয়ে বলেন, ‘তিরান (ত্রাণ) পাইছি কয়দিন খাতি (খেতে) পারবানে।’ ঘরের মধ্যে হাঁটুপানির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাবা বড় কষ্ট কুরি আছি। কবে যে পানি সরি যাবে, সেই চিন্তায় আছি।’

খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের সালেহা বেগমের মতো ২১০ জন বন্যাদুর্গত মানুষকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কালনা আমিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসার মাঠে ওই খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট বিতরণ করা হয়। বিতরণকাজে সার্বিক সহযোগিতা করে প্রথম আলো খুলনা বন্ধুসভা। খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ছিল—চাল, ডাল, তেল, লবণ, আলু, পেঁয়াজ ও সাবান।

ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে কয়রার বিভিন্ন এলাকার বাঁধ ভেঙে যায়। প্রায় সব কটি এলাকার বাঁধ মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করেছে। বুধবার মহারাজপুরের দশহালিয়া এলাকার ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু গ্রামের মধ্যে পানি রয়ে গেছে। এখনো হাঁটুপানিতে তলিয়ে আছে বাড়িঘর। ওই মানুষগুলোর হাতেই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে খাদ্যসামগ্রী।

প্রথম আলো ট্রাস্টের খাদ্যসামগ্রী নিতে এসেছেন জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন। বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনার কয়রা উপজেলার কালনা মাদ্রাসা চত্বরে
ছবি: সাদ্দাম হোসেন

প্রথম আলো ট্রাস্টের খাদ্যসামগ্রী পেয়ে খুশি ষাটোর্ধ্ব জরিনা বেগমও। স্বামী নূরুল হক সরদার মারা গেছেন কয়েক মাস আগে। এখন অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চলছে তাঁর। জরিনা বলেন, ‘তিরান পাইয়ি খুব খুশি হইছি। বানের পানিতি বাড়িঘর পইড়ি গেছে, এখন অন্যের বাড়ি থাকতিছি।’

খাদ্যসামগ্রী বিতরণের সময় বক্তব্য দেন ওই গ্রামের ছেলে ও বেসরকারি ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রভাষক আজিজুল ইসলাম। তিনি এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, প্রথম আলো শুধু একটি পত্রিকা নয়, সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি সেটি এখন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। দায়িত্বশীল সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি মানুষের সেবার জন্যও কাজ করে যাচ্ছে। প্রথম আলোর এমন উদ্যোগ অটুট থাকুক, সেই কামনা করেন তিনি।

স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল আলম বলেন, এক সপ্তাহ ধরে মহারাজপুর ইউনিয়নের প্রায় অর্ধেক গ্রাম পানিতে তলিয়ে আছে। নিম্ন আয়ের মানুষ খুব কষ্টে আছে। তারপরও তারা কোনো খাদ্যসহায়তা পায়নি। প্রথম আলো খাদ্যসহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে এটি সত্যিই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

প্রথম আলো খুলনা বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক আসফিক আহমাদ সিদ্দিকী বলেন, প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আইলার পর কয়রা এলাকায় পানিতে ডুবে থাকা মানুষের হাতে সবার আগে খাদ্যসহায়তা তুলে দিয়েছিল প্রথম আলো ট্রাস্ট। গত বছর আম্পানের পরদিনই কয়রা এলাকার বিভিন্ন ইউনিয়নে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছিল। এবারও দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলো।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর খুলনার নিজস্ব প্রতিবেদক শেখ আল-এহসান, খুলনা বন্ধুসভার সহসভাপতি উত্তম তরফদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব কুমার, সাংগঠনিক সম্পাদক পাপন কংস বনিক, নারীবিষয়ক সস্পাদক বনানী আফরোজ, প্রচার সম্পাদক আলফি শাহরিনসহ ১৪ জন সদস্য।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।