তিস্তাপারের ২০০ জন পেলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল

তিস্তা পারের অসহায় মানুষকে শীতের কম্বল দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নীলফামারী পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের বোল্ডার চরে
ছবি: প্রথম আলো

নীলফামারী জেলা শহর থেকে উত্তরে ভারত সীমান্তঘেঁষা পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের বোল্ডারের চরের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। সেখানে বন্যায় গৃহহারা হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। তাঁদের অনেকে এখনো তিস্তার ডান তীরের বাঁধে তাঁবু করে বসবাস করছেন।

যোগাযোগব্যবস্থা এখনো স্বাভাবিক না হওয়ায় বন্ধুসভার সদস্যরা মাইক্রোবাস থেকে নেমে প্রায় এক কিলোমিটার পথ হেঁটে বোল্ডার চরে পৌঁছান। বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্ধুসভার বন্ধুরা সেখানকার অসহায় ২০০ মানুষের হাতে শীতের কম্বল তুলে দেন। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে এসব কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

কম্বল পেয়ে ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের তিস্তাপারের মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘মেলা মাইনষেরঠে গেছু বাবা, মোক কায়ো একনা কম্বল দেয় নাই। তোমরা না চাইতে দিনেন। এইখান গাওত দিয়া আইতোত আরামের নিন হইবে। দোয়া করিম তোমার ভাল্ হইবে।’

লাঠিতে ভর করে কম্বল নিতে এসেছেন মো. সহিদুল ইসলাম (৫৫)। কথা বলে জানা গেল, তাঁর জন্ম থেকেই একটি পা নেই। তিনি ঢাকায় ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বাড়িতে এসে করোনার কারণে আর ঢাকায় যেতে পারছেন না। সহিদুল জানালেন, দুই ছেলে ও স্ত্রী মিলে সাত তালি দেওয়া একটা কম্বল নিয়ে রাত কাটান। কম্বল পেয়ে তাঁদের খুব উপকার হলো।

কম্বল বিতরণের সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিমলা জনতা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবদুল লতিফ খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. কুরবান আলী, প্রথম আলো নীলফামারী প্রতিনিধি মীর মাহমুদুল হাসান, নীলফামারী বন্ধুসভার উপদেষ্টা সুধির রায়, সভাপতি এনামুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক তমা রায়, সাবেক সভাপতি নিপুণ রায়, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান প্রমুখ।

২০০ অসহায় ও গরিব মানুষকে দেওয়া হয়েছে প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল। বৃহস্পতিবার দুপুরে নীলফামারী পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের বোল্ডার চরে
ছবি: প্রথম আলো

কম্বল বিতরণের আগে গতকাল বুধবার বন্ধুসভার সদস্যরা পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের পূর্বছাতনাই গ্রাম, ঝাড়সিংহেরস্বর, বোল্ডারের চর, খোকার চর, সরকারপাড়া, গেন্দির চর, হাফিজার পাড়া, কালীগঞ্জসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে অসহায় ও দরিদ্র ২০০ মানুষের কাছে স্লিপ পৌঁছে দেন। সেই স্লিপ দেখে আজ তাঁদের হাতে কম্বল তুলে দেওয়া হয়েছে।

আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘স্বামী বুড়া হইছে কামকাইজ করিবার পায় না, নিজের জমিও নাই। মাইনসের জমিত থাকি, হামার খুব কষ্ট। তোমরা এত দূর আসি হামাক কম্বল দিনেন, এইটা পায়া হামার খুব উপকার হইল।’

এর আগে কোনো কম্বল পাননি ঝাড় মৌজা গ্রামের বৃদ্ধ আবদুল কাদের। কম্বল পেয়ে তিনি বেশ খুশি। কালীগঞ্জ গ্রামের নার্গিস বেগম বলেন, ‘এই নদী (তিস্তা) হামার সব শ্যাষ কইরছে। নিজের ভিটাও নাই। হামরা খিব হাউস করি, কিন্তু হামাক কাও কম্বল দেয় না, এইবার তোমরায় হামাক প্রথম কম্বল দিলেন।’

এ বছর শীতার্ত মানুষের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ তহবিলে বুধবার পর্যন্ত ৭ লাখ ৭৭ হাজার ২৩৯ টাকা জমা পড়েছে। ত্রাণ তহবিলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬ লাখ ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি জমা দিয়েছেন। বিকাশের মাধ্যমে জমা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৮৩৯ টাকা। এরই মধ্যে শীতার্ত মানুষের জন্য ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে।

শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।

অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে।