তুলির আঁচড়ে দেয়াল রাঙান তিনি

রাজশাহীতে আবুল বাশারের আঁকা দীর্ঘ দেয়ালচিত্রছবি: সংগৃহীত

চারুকলার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে শখ করেই দেয়ালচিত্র এঁকেছিলেন আবুল বাশার। তখন তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সেই থেকে শুরু। আর এখন বেশ গর্ব করেই এ শিল্পী বলেন, ‘রাজশাহীর সবচেয়ে বড় দেয়ালচিত্রটি আমার করা।’

রাজশাহী উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরের সড়কসংলগ্ন দেয়ালে আবুল বাশারের আঁকা চিত্রটির উচ্চতা ১১ ফুট, দৈর্ঘ্য ৫৯ ফুট। এটি একটি রেস্তোরাঁর দেয়ালে করা। শেষ করতে সব মিলিয়ে ১০ দিনের মতো সময় লেগেছে।

নিজের আঁকা দেয়ালচিত্রের সামনে আবুল বাশার
ছবি: সংগৃহীত

শখের বশে শুরু হলেও মূলত সেই দেয়ালকে ছবি আঁকার ক্যানভাস হিসেবে বেছে নিয়েছেন বাশার। কোনো দেয়ালে পাখির কিচিরমিচির। কোনো দেয়ালে অক্টোপাস বা মাছ। কোনো দেয়ালে আবার লোভনীয় পিৎজার ছবি। ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের আঁকা বিখ্যাত চিত্রও স্থান পেয়েছে কোনো দেয়ালে। কোনোটাতে মোটরবাইকের দুরন্ত ছুটে চলা। রাজশাহীর আটকোষী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালে ইংরেজি বর্ণমালার গাছ, ফুলের নজরকাড়া একটি চিত্র আছে। শুধু রাজশাহীতে প্রায় ১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেয়ালচিত্র করেছেন তিনি।

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়ালও রাঙিয়ে তুলেন বাশার
ছবি: সংগৃহীত

বাশার বললেন, একটি ফাঁকা, বিবর্ণ দেয়ালের চেয়ে ছবি আঁকা রঙিন দেয়াল দেখতে অনেক ভালো লাগে। ব্যস্ত মানুষ চলতি পথে একটু থমকে গিয়ে সেই দেয়ালটাই আগ্রহ নিয়ে দেখছেন, মুঠোফোনে দেয়ালের সঙ্গে অনেকে সেলফিও তোলেন। আর এসবই অনুপ্রাণিত করে বাশারকে। বললেন, শিল্পবোদ্ধা না হয়েও সাধারণ মানুষ শিল্পকর্মটি দেখে কিছু উপলব্ধি করার চেষ্টা করছে। তাতেই তো শিল্পের সার্থকতা। এটিকে মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার একটি মাধ্যম বা উপায়ও বলা যায়।

আবুল বাশারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়। তিনি তাঁর দেয়ালচিত্রকে বর্তমানে ব্যবসায়িক রূপ দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন বিফাইন (Bfine) নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

দেয়ালচিত্র আঁকায় ব্যস্ত বিফাইনের কর্মীরা
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ৪ জন শিক্ষার্থীসহ ১০ জন বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানটি সারা দেশেই কাজ করছে দেয়ালচিত্র ও দেয়ালসজ্জায়।

বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, স্কুল কর্তৃপক্ষ, রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী এবং অনেকে বাড়ির দেয়াল সাজানোর জন্যও অর্ডার দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে ২০০টি দেয়ালচিত্রের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দেয়ালের বাইরে অন্যান্য পেইন্টিংও করে বিফাইন।

দৃষ্টনন্দন এসব দেয়ালচিত্রের সামনে এসে অনেককে ছবি তুলতে দেখা যায়
ছবি: সংগৃহীত

বাশার নিজেকে চিত্রশিল্পী নয়, বরং ‘রংমিস্ত্রি’ হিসেবে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। তিনি বলেন, ‘পৃথিবী জঞ্জালে ভরা নয়, চারপাশটা রঙিন হোক, এটাই চাই সব সময়।’ এই রংমিস্ত্রি ফেসবুকেও লিখেছেন, ‘যে মনে রং নেই, সে আবার কেমন মন, রংমিস্ত্রির রংই জীবন।’

ঘরের ভেতরের দেয়াল সাজাতেও কাজ করেন বাশার
ছবি: সংগৃহীত

বাশার বলেন, এখন পর্যন্ত মানুষ চিত্রকর্মকে সেভাবে মূল্যায়ন করে না। অনেকে ভাবেন, শিল্পকর্ম মানেই অনেক টাকা–পয়সার বিষয়। কম পয়সাতেও যে একটি দেয়ালকে সম্পূর্ণ রঙিন করা যায়, সে ধারণাও অনেকের ছিল না। তবে বর্তমানে মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আসছে। আবুল বাশার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে ‘বাংলাদেশের ভূদৃশ্য চিত্রকলা (১৯৭১-২০১১)’ নিয়ে এমফিল করছেন।

আবুল বাশার ভবিষ্যতে তাঁর প্রতিষ্ঠানটিকে একটি শিল্প বিপণন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চান। মা–বাবা আর বড় বোনকে নিয়েই আবুল বাশারের সংসার। কীভাবে দেয়ালচিত্র আঁকতে হয়, তা নিয়ে তাঁর আছে একটি ইউটিউব চ্যানেল।

আবুল বাশার