তৃতীয় দফায় তিন দিনের রিমান্ডে ওসি প্রদীপসহ তিন আসামি

কক্সবাজার আদালতে সিনহা হত্যা মামলার প্রধান আসামি ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। আজ শুক্রবার বিকেলে।প্রথম আলো

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় প্রধান তিন আসামির তৃতীয় দফায় আরও তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি শেষে আজ শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেন টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত। গতকাল বৃহস্পতিবার এই তিন আসামির চার দিনের রিমান্ড শেষ হয়। আজ শুক্রবার তৃতীয় দফায় পুনরায় তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

আদালত ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে আলোচিত এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাবের গাড়িতে করে ওসি প্রদীপ, লিয়াকত আলী ও নন্দদুলাল রক্ষিতকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। বেলা সোয়া তিনটার দিকে আসামিদের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে আনা হয়। শুনানি শেষে বিকেল সোয়া চারটার দিকে আসামিদের র‌্যাবের গাড়িতে তুলে নেওয়া হয় র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ে।

আদালতে রিমান্ডের বিরোধিতা করে ওসি প্রদীপ কুমার দাশের জামিনের আবেদন করেন চট্টগ্রাম থেকে আসা একদল আইনজীবী। সেই দলের প্রধান আহসানুল হক আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ইতিমধ্যে দুই দফায় ১১ দিন রিমান্ডে নিয়ে বর্বর নির্যাতন করে ওসি প্রদীপের হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাই তৃতীয় দফায় রিমান্ডের প্রয়োজন নেই।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা নির্যাতনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আদালতকে বলেন, রিমান্ডে নিয়ে যদি ওসি প্রদীপের হাত-পা ভেঙে দিলে তিনি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন কীভাবে? শুনানি শেষে আদালত আসামিপক্ষের আবেদন নাকচ করে ওসি প্রদীপসহ সিনহা হত্যা মামলার তিন আসামিকে তৃতীয় দফায় তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

কক্সবাজার আদালতে সিনহা হত্যা মামলার প্রধান আসামি ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। আজ শুক্রবার বিকেলে।
প্রথম আলো

শুনানি শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসানুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ওসি প্রদীপের জন্য লড়তে তাঁরা উচ্চ আদালতে যাবেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, সিনহা হত্যা মামলার প্রধান তিন আসামি ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতকে তৃতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে চার দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে আসামিদের প্রথম দফায় সাত দিন ও দ্বিতীয় দফায় চার দিন রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারী সংস্থা।

গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিও চিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা। এ সময় পুলিশ সিনহার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে আটক করে। পরে নীলিমা রিসোর্ট থেকে শিপ্রা দেবনাথকে আটক করা হয়। দুজনই এখন জামিনে মুক্ত।

সিনহা হত্যা মামলার অপর চার আসামি টেকনাফ থানার এসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুনের দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হলেও এ পর্যন্ত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেনি তদন্তকারী সংস্থা।

মামলার তদন্তকারী সূত্র জানায়, সিনহা হত্যা মামলার মোট ১৩ জন আসামি রয়েছেন। তাঁরা হলেন টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, এসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, এপিবিএনের তিন সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ এবং টেকনাফের মারিশবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আইয়াস।

সিনহা হত্যা মামলার অপর চার আসামি টেকনাফ থানার এসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুনের দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হলেও এ পর্যন্ত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেনি তদন্তকারী সংস্থা। তাঁরা বর্তমানে জেলা কারাগারে অবস্থান করছেন।

এর আগে প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় মোট ১১ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সিনহা হত্যা মামলার আরও ছয় আসামিকে। তাঁরা হলেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ এবং টেকনাফের মারিশবুনিয়া গ্রামের তিনজন নুরুল আমিন, নাজিম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আইয়াস। এর মধ্যে এপিবিএনের তিন সদস্য আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আরও পড়ুন