তৃতীয় সন্তানও মেয়ে হবে জেনে ছেলে নবজাতকটি কিনেছিলেন অন্তঃসত্ত্বা মা

নরসিংদী সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে চুরি যাওয়ার ১৫ ঘণ্টা পর উদ্ধার নবজাতক
প্রথম আলো

নরসিংদী সদর হাসপাতাল থেকে চুরি যাওয়া ছেলে নবজাতককে মাত্র দুই হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। তৃতীয় সন্তান মেয়ে হবে জানতে পেরে দুই হাজার টাকায় নবজাতকটিকে কিনেছিলেন দুই মেয়ের মা এক অন্তঃসত্ত্বা নারী। সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই নবজাতককে উদ্ধার করে পুলিশ।

নবজাতককে উদ্ধারের পর সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ রাসেল শেখ। আজ সোমবার দুপুরে নরসিংদী মডেল থানার সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঘটনার পরপরই নবজাতক চুরির সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। যে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ওই নারী হাসপাতাল থেকে বের হয়েছিলেন, তা শনাক্ত করা হয়। কিন্তু ওই রাতেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে নবজাতক চুরির ঘটনা জানতে পেরে ওই চালক নরসিংদী মডেল থানায় যোগাযোগ করেন। পরে তাঁকে নিয়েই শহরের মালাকার মোড়ের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ওই নবজাতককে উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের ভাষ্য, গতকাল রাত একটার দিকে চালককে সঙ্গে নিয়ে মালাকার মোড়ের লিপিকা মালাকারের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। লিপিকা মালাকারের দুই মেয়ে। বর্তমানে তিনি ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তিনি জেনেছেন, এবারও তাঁর আরেকটি মেয়ে হবে। সম্প্রতি চিকিৎসার জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালে গেলে তাঁর ওই অজ্ঞাত নারীর সঙ্গে পরিচয় হয়। আলাপচারিতার একপর্যায়ে তিনি নিজের ঠিকানা ওই নারীকে জানিয়ে বলেছিলেন, কেউ যদি নবজাতক ছেলে দত্তক দিতে চান, তাহলে যেন তাঁকে জানানো হয়। এর সূত্র ধরেই নবজাতক চুরির পর ওই নারী গতকাল দুপুরে লিপিকা মালাকারের বাড়িতে ওই নবজাতককে নিয়ে যান। ২ হাজার টাকা নিয়ে নবজাতকটিকে লিপিকার হাতে তুলে দিয়ে ফিরে যান তিনি।

অন্তঃসত্ত্বা মা পুলিশকে জানিয়েছেন, অনাগত সন্তানের পাশাপাশি তিনি ছেলে সন্তানকে লালন-পালন করতে চেয়েছিলেন।

এর আগে গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে নরসিংদী সদর হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার বহির্বিভাগ থেকে এই নবজাতক চুরির ঘটনা ঘটে। এর ১৫ ঘণ্টা পর গতকাল রাত ২টার দিকে শহরের মালাকার মোড়ের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ওই নবজাতককে উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের পর ওই নবজাতককে তাঁর মায়ের কোলে তুলে দিয়েছে পুলিশ।

নবজাতকটি মো. আনিস মিয়া ও সুমাইয়া আক্তার দম্পতির। সম্প্রতি অন্তঃসত্ত্বা সুমাইয়া ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে নরসিংদীতে বাবার বাড়িতে আসেন। তাঁর বাবার বাড়ি নরসিংদী সদর উপজেলার মহিষাশুড়া ইউনিয়নের চান্দেরপাড়া গ্রামে।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নরসিংদী সদর হাসপাতাল সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুমাইয়া আক্তার ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। পরে ঠান্ডাজনিত সমস্যা দেখা দেওয়ায় গতকাল বেলা ১১টার দিকে ওই নবজাতককে চিকিৎসার জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান তার নানি পরীবানু। হাসপাতালটির দ্বিতীয় তলায় বহির্বিভাগে রোগীর লম্বা লাইন ছিল। এ সময় সিরিয়াল এগিয়ে আনার চেষ্টা করার জন্য নবজাতকের নানিকে পরামর্শ দেন পাশে থাকা অজ্ঞাত এক নারী। তার পরামর্শে নবজাতককে অজ্ঞাত ওই নারীর কোলে দিয়ে সিরিয়ালের খবর নিতে সামনে এগিয়ে যান পরীবানু। এই সুযোগে নবজাতককে নিয়ে উধাও হয়ে যান অজ্ঞাত ওই নারী।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, যার কাছ থেকে নবজাতকটিকে পাওয়া গেছে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তবে যিনি নবজাতকটিকে চুরি করেছিলেন তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।