‘তোমরা খোঁজ নিয়েছ, তোমাদের জন্য দোয়া করি’
বিধবা খালেদা আক্তার (৬৫) ছাত্রদের মেসে রান্নার কাজ করে জীবন চালান। এখন মেস বন্ধ, তাই রান্নাও বন্ধ। তাঁর মেয়েরও (৩৫) স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। একমাত্র মেয়ে আর ছয় বছর বয়সের নাতিকে নিয়ে তাঁর সংসার। তিন বেলা ঠিকমতো খাবারই জোটাতে পারছেন না এই বৃদ্ধা। ঈদের দিন সেমাই আর মাংস রান্না করে খাবেন, এমনটা ভাবনাতেও ছিল না। এমন সময় বন্ধুসভার ঝিনাইদহের সদস্যরা চাল, ডাল, সেমাই, চিনি, মুরগি নিয়ে হাজির হন তাঁর বাড়িতে।
ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চনপুর এলাকায় একটি ঝুপড়িতে খালেদা আক্তার মেয়ে-নাতিকে নিয়ে বসবাস করেন। উপহারগুলো দেখে তিনি কান্না শুরু করেন। পরে নিজের আঁচলে চোখ মুছে বলেন, ‘বাবারা তোমরাই আমার ছেলে। আমার ঈদ আনন্দ নিয়ে ভাবার কেউ নেই, তোমরা খোঁজ নিয়েছ। তোমাদের জন্য দোয়া করি, সমাজে আমার মতো মানুষগুলোর খবর নেওয়ার সুযোগ-সামর্থ্য যেন সব সময় তোমাদের থাকে। তোমাদের কারণে এবার ঈদে ভালো খাবার খেতে পারব।’
ব্যাপারীপাড়া এলাকার শফি মীর ঘরের বারান্দায় শুয়ে আছেন। একসময় উদয়াস্ত খেটে সংসার চালিয়েছেন, এখন আর পারেন না। ঘরের বিছানায় পড়ে থাকেন। তাঁর কাছে সব দিন সমান। সামনে ঈদ, এটা নিয়ে তাঁর কোনো ভাবনা নেই। তাঁর একটাই কথা, ‘কেউ কিছু দিলে খাব, না দিলে খাব না।’ এমন সময় বন্ধুসভার সদস্যদের দেওয়া ঈদ উপহার পেয়ে খুবই খুশি তিনি।
গত দুই দিনে এ রকম ২৫ জন হতদরিদ্র মানুষের হাতে ঈদ উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন বন্ধুসভার সদস্যরা। উপহারসামগ্রীর মধ্যে ছিল চাল, ডাল, সেমাই, চিনি, তেল, আলু, মুরগিসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী। প্রতিজনের হাতে ৮২০ টাকার খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন্ধুসভার সভাপতি সাকিব মোহাম্মদ আল হাসান, সাধারণ সম্পাদক শানজিদা আফরোজ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু রেজা আল হাসান, আশফিকা আনজুম, আসিফ আল আফ্রিদী, অতনু বিশ্বাস, খন্দকার মাইয়া রহমান, এ কে নেওয়াজ প্রমুখ।
সভাপতি সাকিব মোহাম্মদ আল হাসান বলেন, বন্ধুসভার সদস্যরা ঈদের খরচ কমিয়ে টাকা বাঁচিয়ে এই খাদ্যসামগ্রী ক্রয় করেন। হতদরিদ্রদের কাছে এসব খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।