‘তোমারে বোলাইবে কেডা’

পৌরসভাটির ভোট গ্রহণ হবে ২৮ ডিসেম্বর। সেখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলনের তিনজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন লোকমান হোসেন ডাকুয়া। বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান।

পৌরসভা নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে রাস্তা। গত শনিবার দুপুরে বরিশাল উজিরপুর উপজেলা পরিষদের সামনে
প্রথম আলো

নির্বাচনী আমেজ পাওয়া যায়, এমন স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম এলাকার চায়ের দোকান। কোন প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা বেশি, তাঁর আগের কর্মকাণ্ড এসব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় আড্ডারত মানুষের মুখে। গতকাল রোববার দুপুরে এমন একটি আড্ডা বসেছিল বরিশালের বাকেরগঞ্জ শহরের বাসস্ট্যান্ডের একটি চায়ের দোকানে। তবে সেখানে প্রার্থীর চেয়ে ভোট দেওয়া নিয়েই আলাপ হলো বেশি।

আড্ডারত আটজনের বেশির ভাগই দিনমজুর শ্রেণির। তাঁরা শুনেছেন বাকেরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। তবে ইভিএমে ভোট দেওয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই তাঁদের। আটজনের মধ্যে বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় তিনজনের কথোপকথন ছিল এমন, ‘এইফির বোলে মোগো ভোট অইবে কম্পিউটারে।’ দ্বিতীয়জন বললেন, ‘যেই রহম অয় অউক, মোগো ভোট দেওনে কাম কী। ভোট দিয়া কি মোগো প্যাডে ভাত অইবে?’ তৃতীয়জনের মন্তব্য, ‘য্যাগো ভোট হ্যারাই দিয়া লইবে আনে, তোমারে বোলাইবে কেডা!’

কয়েকটা ইলেকশনে মানুষের আস্থায় ঘাটতি হয়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থীরা এসে ইভিএমে কীভাবে ভোট দিতে হবে তা শিখিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন।
মানিক মোল্লা, ভোটার, ৭ নম্বর ওয়ার্ড

এই ভোটারদের মতো ভোট দেওয়া নিয়ে অনাগ্রহের কথা জানা গেল পৌরসভার আরও বেশ কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে। নির্বাচনের বাকি আর কয়েক দিন। কিন্তু ওই চায়ের দোকানটি ছাড়া আর কোথাও নির্বাচন নিয়ে খুব বেশি আগ্রহী হয়ে কথা বলতে দেখা গেল না ভোটারদের। প্রচারণায় আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলের প্রার্থীদের তেমন সাড়া নেই। বিএনপির প্রার্থী ভোট সুষ্ঠু হওয়া নিয়েই শঙ্কা প্রকাশ করলেন। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বক্তব্য, কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাররা সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিলে তিনিই জিতবেন।

পৌরসভাটির ভোট গ্রহণ হবে ২৮ ডিসেম্বর। সেখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলনের তিনজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন লোকমান হোসেন ডাকুয়া। বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান। অপর দিকে ইসলামী আন্দোলনের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী খলিলুর রহমান।

মেয়র পদ ছাড়াও পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ২৯টি সাধারণ কাউন্সিলর এবং তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৯টি কাউন্সিলর পদের ভোট গ্রহণ হবে। এই পৌরসভায় পুরুষ ভোটার ৭ হাজার ৬৭০ ও নারী ভোটার ৭ হাজার ৬৩৪ জন। রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুল আলম বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ পরিবেশে অনুষ্ঠানের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন তাঁরা।

গতকাল দুপুরে বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে কথা হলো ভরপাশা এলাকার বাসিন্দা হাফিজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সবই তো বোঝেন! এবার তো করোনার কারণে প্রার্থীরা এসে ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ও করতে পারছেন না। দূর থেকে সালাম দিয়ে চলে যান।’

উত্তর-পশ্চিম ভরপাশা এলাকার আরেক ভোটার মানিক মোল্লা বলেন, ‘কয়েকটা ইলেকশনে মানুষের আস্থায় ঘাটতি হয়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থীরা এসে ইভিএমে কীভাবে ভোট দিতে হবে তা শিখিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন।’

প্রচারণার বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী লোকমান হোসেন ডাকুয়া বলেন, ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে এতে সন্দেহ নেই। সবাই নির্বিঘ্নে প্রচারণা করছেন। তবে বিএনপি প্রার্থী মনিরুজ্জামান বলেন, আগের নির্বাচনগুলোতে প্রচারণা চালাতে গিয়ে নেতা-কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাই এবার দলবদ্ধভাবে প্রচারণার কার্যক্রম নেই।