ত্বকী ও করোনায় মৃতদের স্মরণে আলোক প্রজ্বালন

ত্বকীর প্রতিকৃতির সামনে মোমশিখা প্রজ্জ্বালন করেন ত্বকীর মা রওনক রেহানা ও বাবা রফিউর রাব্বি। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায়
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ৯৮ মাস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বানে ত্বকী ও করোনায় আক্রান্ত হয়ে সারা বিশ্বের মৃতদের স্মরণে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় নিজ নিজ অবস্থানে থেকে কর্মসূচিতে দুই শতাধিক সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সমাজকর্মী অংশ নেন।

কর্মসূচি উপলক্ষে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, এই করোনা দুর্যোগেও হত্যা, খুন, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ কিছুই বন্ধ নেই।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ও লকডাউনকে সরকার প্রতিপক্ষকে দমানোর সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছে। অবাধে গাছ কাটছে, বন ধ্বংস করছে, আবার জলবায়ু পরিবর্তনের সংকটের জন্য প্রকৃতি রক্ষায় অন্য দেশকে উপদেশ দিচ্ছে। সরকার বেছে বেছে বিচার সংগঠিত করছে। যে ঘটনা বা অপরাধের সঙ্গে সরকারদলীয় লোকজনের সংশ্লিষ্টতা নেই, তারা কেবল সেসব বিচারেই আগ্রহী। অপরাধী দলীয় বা সরকারসংশ্লিষ্ট হলে সে বিচার আর আলোর মুখ দেখছে না।

তিনি বলেন, সাড়ে সাত বছর আগে ত্বকী হত্যার তদন্ত শেষ হয়ে অভিযোগপত্র তৈরি করে রাখার পরও তা আদালতে পেশ করা হয়নি। আইনকে কেবলই নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে গিয়ে সরকার গোটা বিচারব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উল্টোপথে এ সরকার চলতে চলতে বিচারব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনী ব্যবস্থা, মানুষের নিরাপত্তা, মৌলিক অধিকার, গণতন্ত্র সবকিছু ধ্বংস করে চলেছে। তিনি সাগর-রুনি, তনুসহ নারায়ণগঞ্জের আশিক, চঞ্চল, মিঠু, বুলু হত্যার বিচার দাবি করেন।

সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায় বলেন, ‘দীর্ঘ আট বছর ধরে আমরা ত্বকীসহ নারায়ণগঞ্জের সব হত্যার বিচার চেয়ে আসছি, কিন্তু সরকার বিচার বন্ধ করে রাখায় অপরাধীরা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা নারায়ণগঞ্জ ও দেশের সব হত্যার বিচার চাই। অশুভ অন্ধকারের অবসান চাই।’

করোনা বাস্তবতায় নিজ নিজ অবস্থানে থেকে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহাবুবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম, প্রদীপ ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা, মনি সুপান্থ, খেলাঘর নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, উদীচী জেলা সভাপতি জাহিদুল হক, সমগীতের সভাপতি অমল আকাশ, সিপিবি জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাসদ জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাস, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন প্রমুখ।

উল্লেখ্য ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন ত্বকী। দুদিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ২০১৪ সালের ৫ মার্চ তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাঁদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছেন। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজও আদালতে পেশ করা হয়নি। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।