ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্র দ্রুত প্রদান ও বিচারের দাবিতে ২৬ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি

তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী
ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দ্রুত প্রদান ও বিচারের দাবিতে দেশের ২৬ বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে ২৬ জন বিশিষ্ট নাগরিক বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে ৬ মার্চ। অথচ আজ পর্যন্ত এ হত্যার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়ে বিচারকাজ শুরু করা হয়নি। আমরা এতে উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ। কিন্তু এ হত্যাকাণ্ডের এক বছর না যেতেই মামলার তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব কেন কখন কোথায় কারা এবং কীভাবে ত্বকীকে হত্যা করেছে, তা সংবাদ সম্মেলন করে যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করেছিল; যা আমরা তখন সংবাদপত্র ও বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানতে পারি। তদন্ত শেষ করার দীর্ঘদিন পরও এ হত্যার অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করা হয়নি। রাষ্ট্রের সব নাগরিকের বিচার পাওয়ার অধিকার সংবিধান নিশ্চিত করেছে। অপরাধীর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দুর্বলতা প্রদর্শন ও বিচারব্যবস্থায় বৈষম্য শুধু আইনের ব্যত্যয়ই নয়, তা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনারও পরিপন্থী। কোনো হত্যার বিচার বন্ধ করে রাখা কখনোই কাম্য হতে পারে না। আমরা অচিরেই ত্বকী হত্যার বিচার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ভাষাসংগ্রামী, লেখক ও রবীন্দ্রগবেষক আহমদ রফিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, শিক্ষাবিদ ও রবীন্দ্রগবেষক সন্‌জীদা খাতুন, ভাষাসংগ্রামী ও শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার, লেখক ও শিক্ষাবিদ হায়াৎ মামুদ, শিল্পী রফিকুন নবী, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, শিক্ষাবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, মানবাধিকার সংগঠক সুলতানা কামাল, আইনজীবী শাহদীন মালিক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক সফিউদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক মাহফুজা খানম, লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারোয়ার আলী, নারীনেত্রী মালেকা বেগম, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, অধ্যাপক শওকত আরা হোসেন, অধ্যাপক শফি আহমেদ, লেখক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য্য এবং আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খান রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুদিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের এক বছরের মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ মার্চ তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ১১ জন ঘাতক ত্বকীকে হত্যা করেছেন। শিগগিরই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। তবে এ পর্যন্ত তা করা হয়নি। ত্বকী হত্যার বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে দ্রুত অভিযোগপত্র প্রদান ও বিচারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।