ত্বকী হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে প্রজ্জ্বালন কর্মসূচি। মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণেছবি: প্রথম আলো

মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও হত্যা মামলাটির বিচার শুরুর দাবি জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। ত্বকী হত্যার সাড়ে সাত বছর উপলক্ষে সমাবেশ ও আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানানো হয়।

মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই কর্মসূচি পালিত হয়। সভাপতিত্ব করেন সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়। সমাবেশে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, এই করোনার দুর্যোগেও হত্যা, গুম, খুন, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, ত্রাণ চুরি—কিছুই বন্ধ নেই। হত্যা-গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিভিন্ন সময় সরকার উৎসাহিত ও পুরস্কৃত করায় এ ধরনের ঘটনা আজ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। সরকার বেছে বেছে বিচার সংঘটিত করে। যে ঘটনা বা অপরাধের সঙ্গে সরকারদলীয় ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতা নেই, তারা কেবল সেসব বিচারই করে। কিন্তু যেসব ঘটনা সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়, সরকার বাধ্য হয়ে সেসবের বিচার করে।

আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব কবি হালিম আজাদ, খেলাঘর নারায়ণগঞ্জ সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম ও প্রদীপ ঘোষ, বাসদের জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাস, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি হাফিজুল রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, সমমান সভাপতি দুলাল সাহা, ন্যাপের মহানগর সহসভাপতি গোবিন্দ সাহা, নারায়ণগঞ্জে ২০১৭ সালে খুন হওয়া কলেজছাত্র শাহরিয়ার শুভ্রর বাবা কামাল সিদ্দিকী।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, একটি থানার ওসি শত শত মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, বরং সরকার তাঁকে পুরস্কৃত করে। একজন সাবেক সেনাসদস্য নিহত না হলে এ ভয়াবহ চিত্র জাতির সামনে উন্মোচিত হতো না। এমন ঘটনা আর কোথায় কোথায় ঘটছে, তা কেউ জানে না। সরকারের বৈষম্যমূলক বিচারব্যবস্থার কারণে দীর্ঘ সাড়ে সাত বছরেও ত্বকী হত্যার বিচার হয়নি বলে অভিযোগ করে বক্তারা বলেন, সাড়ে ছয় বছর আগে ত্বকী হত্যা মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র তৈরি করে রাখা হয়েছে। এরপরেও তা আদালতে পেশ করা হয়নি। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা সরকারদলীয় বলেই বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আইনকে কেবলই নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে গিয়ে সরকার গোটা বিচারব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উল্টো পথে চলতে চলতে এই সরকার বিচারব্যবস্থার পাশাপাশি নির্বাচনী ব্যবস্থা, মানুষের নিরাপত্তা, মৌলিক অধিকার, গণতন্ত্র—সবকিছু ধ্বংস করে চলেছে।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খান রোডের বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় ত্বকী। দুদিন পর শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। একই বছরের ১২ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সাংসদ প্রয়াত নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে তিনি বলেন, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ২০১৪ সালের ৫ মার্চ তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব সংবাদ সম্মেলন করে। তাতে বলা হয়, ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়নি। এরপর থেকে বিচারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।