ত্রুটিপূর্ণ নালা, দুর্ভোগের শঙ্কা

মেয়র ও নির্বাহী প্রকৌশলী পরিবর্তন হওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি কাজ শেষ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা।

সড়ক থেকে দুই ফুট উঁচুতে নালা। সম্প্রতি হবিগঞ্জ শহরের কোর্ট মসজিদ এলাকায়।ছবি: প্রথম আলো

হবিগঞ্জ শহরে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নালা নির্মাণের কাজ সঠিকভাবে না করার অভিযোগ উঠেছে। সড়কে জমা পানি অপসারণের লক্ষ্যে এই নালা। অথচ সড়কের চেয়ে দুই ফুট উঁচুতে নির্মাণ করা হচ্ছে নালা। এতে পানি নালায় যেতে না পারলে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং পথচারীসহ সবাই দুর্ভোগে পড়বেন বলে আশঙ্কা এলাকাবাসীর।

এ ছাড়া পৌরসভার মেয়র ও নির্বাহী প্রকৌশলী পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্ধেক শেষ হওয়া নালা নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে ওই নালার কাজ শেষ করা নিয়ে অনিশ্চয়তাও দেখা দিয়েছে।

হবিগঞ্জ পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে পৌর শহরের প্রধান সড়কের পাশে নালা নির্মাণের জন্য ২০২০ সালের প্রথম দিকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। শহরের কোর্ট মসজিদের সামনে থেকে সিনেমা হল সড়কের মুখ পর্যন্ত ৫৭৫ মিটারে নালা নির্মাণের কাজ পায় ঢাকার এম আর কনস্ট্রাকশন। সেখান থেকে চৌধুরী বাজার ট্রাফিক পয়েন্ট পর্যন্ত আরও ১২০০ মিটারের কাজ পায় ঢাকার ইউনাইটেড কমার্শিয়াল লিমিটেড (ইউসিসিএল)। এ দুটি প্রতিষ্ঠান নিজেরা কাজ না করে স্থানীয় দুজন ঠিকাদারকে দিয়ে কাজটি করাচ্ছিল। গত বছরের মার্চ মাসে শুরু হওয়া এ কাজ চলতি বছরের মার্চ মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কোর্ট মসজিদের সামনে থেকে সিনেমা হল সড়কের মুখ পর্যন্ত নালার কাজ শেষ হয়েছে। তবে সেখান থেকে চৌধুরী বাজার পর্যন্ত ১ হাজার ২ মিটারের মধ্যে প্রায় ৪০০ মিটারের কাজ হয়নি।।

এলাকাবাসী বলছেন, সড়ক থেকে প্রায় ২ ফুট উঁচু করে নালা নির্মাণ করা হয়েছে। আবার অনেক ব্যবসায়ী জায়গা না ছাড়ায় আঁকাবাঁকা করে নালা নির্মাণের কাজ হয়েছে। দরপত্র অনুযায়ী নালার প্রস্থ ৪ ফুট হওয়ার কথা থাকলেও কোথাও কোথাও ২ ফুট, আবার কোথাও ৫ ফুট রাখা হয়েছে।

তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম আর কনস্ট্রাকশনের প্রতিনিধি আজিজুর রহমান ব‌লেন, দরপত্র অনুযায়ী কাজ হয়েছে। এখা‌নে কোনো অনিয়ম হয়‌নি। ইউসিসিএলের প্রতিনিধি সৈয়দ রিয়াজ ব‌লেন, নালা আঁকাবাঁকা হ‌য়ে‌ছে লোকজন জায়গা না ছাড়ার কার‌ণে। তি‌নি আরও বলেন, সড়ক নির্মাণের পর নালা আর উঁচু থাকবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নির্মাণ প্রকৌশলী বলেন, কাজটি শুরুর আগে পৌরসভার উচিত ছিল জেলা সড়ক ও জনপথের সঙ্গে সমন্বয় করা। নালা কতটুকু উঁচুতে হবে বা পানি নিষ্কাশনের মুখ কয়টি কীভাবে রাখতে হবে, এসব আলোচনা করে নেওয়া উচিত ছিল। পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সেটি না করে দায়সারা কাজ করছে।

কাজটি শুরু করার সময় পৌরসভার মেয়র ছিলেন মিজানুর রহমান। একই সময়ে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে ছিলেন শহীদুল ইসলাম। তাঁদের মধ্যে মিজানুর রহমান গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে জেলা যুবলীগের সভাপতি আতাউর রহমানের কাছে পরাজিত হন।

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদুল ইসলামও গত মার্চে অবসরে গেছেন। নালা নির্মাণ প্রকল্পের নানা অনিয়মের বিষয়ে পৌরসভার বাসিন্দারা মূলত সাবেক মেয়র ও নির্বাহী প্রকৌশলীকে দায়ী করছেন। তাঁদের প্রশ্রয়ে ঠিকাদারেরা দরপত্র অনুসরণ না করে নিজেদের মতো করে যেনতেনভাবে এ কাজ করেন। তবে মেয়র মিজানুর রহমান বলেন, এর দায়দায়িত্ব তাঁর নয়, দায় নির্বাহী প্রকৌশলীর। এ বিষয়ে সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম ব‌লেন, নালা উঁচু রাখা হ‌য়ে‌ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ যখন সড়ক নির্মাণ কর‌বে, তখন সড়কের উচ্চতা বাড়‌বে—এ কথা চিন্তা করে। কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি।

এ বিষয়ে সওজের হবিগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সজীব আহমেদ বলেন, ‘পৌরসভার আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করলে ভালো হতো। আমরা সওজ থেকে প্রধান সড়ক নির্মাণের সঙ্গে ড্রেন তৈরির পরিকল্পনাও গ্রহণ করি। কিন্তু পৌরসভা এ ড্রেনের কাজ শুরু করায় আমরা এ পরিকল্পনাটি বাদ দিই।’