থানচি ও আলীকদমে ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি, এক সপ্তাহে ১০ জনের মৃত্যু

বান্দরবান জেলার মানচিত্র

বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রি ও আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নের দুর্গম ম্রোপাড়ায় ছড়িয়ে পড়া ডায়রিয়ায় আজ বুধবারও একজনের মৃত্যু হয়েছে।

এ নিয়ে এক সপ্তাহে ১০ জন মারা গেল। দুই ইউনিয়নের ১৬টি পাড়ায় আজও ৬০ জনের অধিক আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।

জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রেমাক্রি ইউনিয়নের মারিচ্যাপাড়ায় আজ প্রেনু ম্রো (৩৬) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে থানচিতে ৬ জুন থেকে এ পর্যন্ত ৯ জন এবং আলীকদমের কুরুকপাতায় একজনের মৃত্যু হলো। থানচির রেমাক্রি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গম সাতটি ম্রোপাড়ায় আজ দুপুর পর্যন্ত ৪৬ জন ডায়রিয়ার রোগী পাওয়া গেছে। আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়ন থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪ জন গুরুতর রোগী ভর্তি হয়েছেন। কম গুরুতর রোগীদের পাড়াগুলোতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

রেমাক্রি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আন্ধারমানিক, মারিচ্যা এলাকাটি থানচি উপজেলা সদরের ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে মিয়ানমারের সীমান্তের কাছাকাছি সাঙ্গু সংরক্ষিত বনাঞ্চলসংলগ্ন। শঙ্খ নদের উজানে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ছাড়া সেখানে কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। আর কুরুকপাতা ইউনিয়নের পুয়ামুহুরি আলীকদম উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে।

পানির উৎস দূষিত হওয়ায় এবং ম্রো জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতার সমস্যা থাকায় প্রতিবছর ডায়রিয়া হচ্ছে বলে জানান আলীকদমের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ওয়াহিদুজ্জামান জানান, স্বাস্থ্য বিভাগ ও বিজিবির চিকিৎসাসেবা দল দুর্গম আন্ধারমানিক ও মারিচ্যা এলাকায় আক্রান্ত ৪৬ জন রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে এসেছে। আলীকদমের ইউএইচএফপিও মাহতাব উদ্দিন জানান, কুরুকপাতার দুর্গম পাড়াগুলোতে সেনাবাহিনীর চিকিৎসাসেবা দল কাজ করছে। পানির উৎস দূষিত হওয়ায় এবং ম্রো জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতার সমস্যা থাকায় প্রতিবছর ডায়রিয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

থানচি উপজেলা পরিষদে ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ে আজ বেলা ১১টায় সভা হয়েছে। এতে জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসংক্রান্ত আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ক্যসাপ্রু মারমা, সিভিল সার্জন নীহার রঞ্জন নন্দী, উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লামং মারমা, ইউএইচএফপিও ওয়াহিদুজ্জামান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সিভিল সার্জন নীহার রঞ্জন নন্দী সভা শেষে জানিয়েছেন, সভায় ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সার্বিক পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় রেমাক্রি ইউনিয়নের দুর্গম আন্ধারমানিক এলাকায় একটি ফিল্ড হাসপাতাল চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে উপজেলা ও জেলা পরিষদ থেকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সব প্রস্তুতি শেষ করে পরশু শুক্রবার ১০ শয্যার হাসপাতালটি চালু হয়ে যাবে। সেখানে ওই এলাকার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে এসে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে।