থানাফটকে হত্যা মামলায় আ.লীগ নেতার পর যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

দামুড়হুদা মডেল থানা ভবন।
ফাইল ছবি

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় থানা চত্বরে সালিস বৈঠক শেষে ফটকের সামনেই বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আইনজীবী আবু তালেবকে (৫২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে উপজেলা শহরের খাঁপাড়া থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে শুক্রবার দুপুরে দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামকে (৫৪) গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শনিবার গ্রেপ্তার দুজনকে আদালতের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গত শুক্রবার বেলা ১টা ১৫ মিনিটের দিকে জমিজমাসংক্রান্ত সালিস শেষে বাড়ি ফেরার পথে থানাফটকের সামনে বৃদ্ধ ইসরাফিল মোল্লাকে পিটিয়ে ও কিল-ঘুষি মেরে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় নিহত ব্যক্তির নাতি মো. আলামিন বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় গ্রেপ্তার শহীদুল ইসলামকে এজাহারে ১ নম্বর এবং আবু তালেবকে ২ নম্বর আসামি করা হয়।

বাকি আসামিরা হলেন পীরপুরকুল্লা গ্রামের নতুন পাড়ার মৃত সামছের মোল্লার তিন ছেলে নজরুল মোল্লা (৩৮), আবদুল ওহাব মোল্লা (৫৫) ও লিয়াকত আলী মোল্লা (৪০) এবং ঠাকুরপুর গ্রামের মৃত রমজান মোড়লের ছেলে আসাদুল মোড়ল (৪৫)।

এজাহারে বলা হয়েছে, নজরুল মোল্লা, আবদুল ওহাব মোল্লা, লিয়াকত আলী মোল্লা ও আসাদুল মোড়লের সঙ্গে বাদীপক্ষের জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ১২টার সময় এই বিরোধ মীমাংসার জন্য আলামিন এবং তাঁর দাদা ইসরাফিল মোল্লা (৮০), দাদার চাচাতো ভাই নস্কর মোল্লা (৭০) ও আব্দার মোল্লা (৫৫) এবং চাচা মন্টু মোল্লা (৪০) ও রবিউল মোল্লাসহ (২৮) আরও কয়েকজন দামুড়হুদা মডেল থানায় যান। এরপর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল খালেকের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষের আলাপ-আলোচনা হয়। একপর্যায়ে ওসির সহযোগিতায় উভয় পক্ষের মধ্যে মীমাংসা হয়। ওসি নামাজ পড়তে গেলে উভয় পক্ষ থানা থেকে বের হয়।

শুক্রবার বেলা ১টা ১৫ মিনিটের দিকে আলামিন তাঁর দাদা ইসরাফিলসহ সঙ্গীয় লোকজন নিয়ে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু থানার পাশে তুলা উন্নয়ন অফিসের সামনে পৌঁছালে শহীদুল ইসলাম ও আবু তালেব মিলে ইসরাফিল মোল্লাকে গলা টিপে ধরে এবং গালিগালাজ করতে করতে কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে এবং ধাক্কা দিয়ে রাস্তার ওপর ফেলে দেয়। এরপর বাকি আসামিরা চারদিক থেকে তাঁকে (ইসরাফিল) এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। ঠেকাতে গেলে আসামিরা সবাই মিলে চড়াও হয়। চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন গুরুতর আহত ইসরাফিল মোল্লাকে অচেতন অবস্থায় দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, দামুড়হুদা থানা এলাকায় যেকোনো ঘটনায় আসামি শহীদুল ও আবু তালেব নিজেদের জড়িয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে দুই পক্ষের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করেন। পক্ষপাতমূলক আচরণসহ দালালি করেন বলে এলাকায় জনশ্রুতি আছে। তাঁরা (শহীদুল ও আবু তালেব) অন্য আসামিদের আত্মীয় বা এলাকার লোক না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে তাঁদের পক্ষপাতিত্ব করেন। সেই সঙ্গে বিনা উসকানিতে শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে আসামিরা ইসরাফিল মোল্লাকে মারপিট করে খুন করেছেন।

দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল খালেক বলেন, গ্রেপ্তার দুই আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে।