থানায় প্রতিকার চাইতে গিয়ে উল্টো গ্রেপ্তার হলেন তিনি

রতন রায়
ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্টের জেরে থানায় প্রতিকার চাইতে গিয়ে উল্টো গ্রেপ্তার হয়েছেন রতন রায় (৩৯) নামের এক ব্যবসায়ী। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশের করা মামলায় গতকাল শুক্রবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শনিবার দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার রতন রায় সরাইল উপজেলার অরুয়াইল গ্রামের মৃত অবনী রায়ের ছেলে। তিনি পেশায় কাপড়ের ব্যবসায়ী। অরুয়াইল বাজারে তাঁর কাপড়ের দোকান আছে।
রতনের পরিবারের দাবি, রতন পঞ্চম শ্রেণির পর আর পড়াশোনা করেননি। তিনি মুঠোফোন ব্যবহার করলেও এর যথাযথ প্রয়োগ জানেন না। রতনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে। কিন্তু ফেসবুক কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, কীভাবে ছবি বা লেখা পোস্ট করতে হয়, তা তিনি জানেন না। রতনের এক চাচাতো ভাই তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছেন। তাঁর হ্যাক হওয়া ফেসবুক আইডি থেকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্টের প্রতিকার চাইতে রতন নিজে থেকেই দুই দফায় সাধারণ ডায়েরি করতে থানায় গিয়েছিলেন।

পরিবার, পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ভোরে ইসলাম ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর লেখা ও দুটি ছবি রতনের ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করা হয়। জেলা শহর থেকে এক আত্মীয় বিষয়টি রতনকে জানান। রতন ফেসবুকে বিষয়টি দেখে মুছে ফেলার জন্য চাচাতো ভাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিজিৎ রায়ের কাছে যান। অভিজিৎ সঙ্গে সঙ্গে পোস্টটি মুছে ফেলেন। রতন বিষয়টি নিয়ে ভয় পেয়ে যান।

তিনি চাচাতো ভাই অভিজিৎকে ফেসবুকের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে দিতে বলেন।

কিন্তু দুই ঘণ্টা পর এটি পুনরায় রতনের ফেসবুক থেকে পোস্ট দেওয়া হয়। পরে রতন বিষয়টি স্থানীয় লোকজনকে জানান। স্থানীয় ব্যক্তিদের পরামর্শে রতন শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে করতে সরাইল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে যান। পুলিশ জিডি নেয়নি। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু প্রমাণাদি দেখাতে বলেন। রতন রায় তাঁর দোকানে ফিরে আসেন। দ্বিতীয় দফায় আবার থানায় জিডি করতে যান তিনি। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় রতনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর রতনের চাচাতো ভাই অভিজিৎকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এ ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সরাইল থানায় মামলা করে পুলিশ। মামলার পর পুলিশ গতকাল রতন রায়কে তাঁর দোকান থেকে গ্রেপ্তার করে। আজ শনিবার দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

রতনের বড় ভাই অসিত বলেন, রতন তাঁর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেননি। তিনি ফেসবুকের ব্যবহারও ভালো করে জানেন না। ভারত ও দেশের বাইরে থেকে স্বজনদের যোগাযোগ রক্ষার জন্য রতন স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতেন। রতন যদি এই স্ট্যাটাস দিতেন, তাহলে তিনি নিজে থেকে থানায় জিডি করার জন্য যেতেন না। কে বা কারা এই পোস্ট দিয়েছে, কীভাবে এটি রতনের ফেসবুকে এসেছে, তদন্ত করে দেখা দরকার। এলাকার সবাই জানেন, রতন কোন ধরনের মানুষ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্টটি রতন রায়ের মুঠোফোন থেকে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তদন্ত শেষে এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। নির্দোষ কোনো ব্যক্তিকে হয়রানি করা হবে না।

জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) মো. আনিছুর রহমান ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন জানান, রতন দাবি করছেন, তাঁর ফোন হ্যাক হওয়ায় শুক্রবার সকালে তিনি থানায় জিডি করতে আসেন। উপযুক্ত তথ্যাদি সঙ্গে না থাকায় তিনি জিডি করতে পারেননি। কিন্তু তিনি শুক্রবার সকালে থানায় এসেছেন, এমন কোনো তথ্য তাঁরা পাননি। তারপরও নানাভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার স্বার্থেই বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।