দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের কাজ চলছে: রেলপথমন্ত্রী

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ বিষয়ে অংশীজনের সঙ্গে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলামের মতবিনিময় সভা। আজ বুধবার দুপুরে
প্রথম আলো

রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বলেছেন, দেশের প্রতিটি জেলার সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গেও রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণের চেষ্টা চলছে। এ জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য রেল মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

আজ বুধবার দুপুরে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ বিষয়ে অংশীজনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় রেলমন্ত্রী ও পঞ্চগড়-২ আসনের এই সাংসদ নূরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় ভারসাম্যপূর্ণ রেল যোগাযোগ গড়ে তোলার পাশাপাশি রেলব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। একসময় খুলনা-মোংলা পর্যন্ত রেল যোগাযোগ ছিল। সেই হিসাবেই এখন নদী–সমুদ্রবন্দর এলাকাগুলোসহ প্রতিটি জেলায় রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

রেলমন্ত্রী বলেন, চার দেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা–সংবলিত বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ করা হলে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ বহুমাত্রিক সফলতা অর্জন সম্ভব হবে। পঞ্চগড়বাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ও ভারতের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাবান্ধা-শিলিগুড়ি রেললাইন স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশার কাজ চলছে।

চার দেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা–সংবলিত বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ করা হলে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ বহুমাত্রিক সফলতা অর্জন সম্ভব হবে।
নূরুল ইসলাম, রেলপথমন্ত্রী

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘অবিভক্ত ভারতে যে রেল যোগাযোগ ছিল, ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে অনেকগুলো বন্ধ হয়ে যায়। সেগুলো ধীরে ধীরে চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। সেই সঙ্গে আমরা নতুন করে সম্ভাবনাময় কিছু স্থানে রেল যোগাযোগ স্থাপনের কাজ করছি। ভারতের সঙ্গে যে ৮টি ইন্টারসেকশন পয়েন্ট (আন্তসংযোগ) ছিল, তার মধ্যে ইতিমধ্যে ৫টি চালু করা হয়েছে। অচিরেই বাকিগুলো চালু করা হবে।’

রেল মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণের সমীক্ষা ও নকশা সম্পন্ন হয়েছে। প্রস্তাবিত এই প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে ৪৭ দশমিক ৪ কিলোমিটার নতুন রেললাইন, ৫টি রেলস্টেশন, ৪টি সেতু, ১৪টি কালভার্ট নির্মাণের সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য ৮৬০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হতে পারে। এ ছাড়া আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন রেললাইন ও রেলস্টেশন নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ ছাড়া প্রাথমিকভাবে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে বলে জানা গেছে।

মতবিনিময় সভা শেষে পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত প্রস্তাবিত রেললাইন এলাকা পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম। আজ বুধবার বিকেলে জেলার তেঁতুলিয়া এলাকায়
প্রথম আলো

জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে পঞ্চগড়-১ আসনের সাংসদ মজাহারুল হক প্রধান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত, পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক (প্রজেক্ট ডিরেক্টর) মো. আবু জাফর মিয়া প্রমুখ বক্তব্য দেন। মতবিনিময় সভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, রেল বিভাগের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এ সময় পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের ওপর নির্মিত সমীক্ষা যাচাই প্রতিবেদন ও কারিগরি নকশা প্রজেক্টরের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।

সভা শেষে মন্ত্রী পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত প্রস্তাবিত রেললাইন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন।